বুধবার, ৪ নভেম্বর, ২০১৫

বৃষ্টির চক্রাবর্তন সম্পর্কে পবিত্র কোরআনে যা বলা হয়েছে!

বৃষ্টির চক্রাবর্তন সম্পর্কে পবিত্র কোরআনে যা বলা হয়েছে!

এভাবে আকাশ পৃথিবীকে সেই পানি ফিরিয়ে দেয় যা একটি নিত্য চক্রাবর্তে তার কাছে উঠে। এই বিষয়টি বর্ণনার পর কোরান মাজিদ মানব জাতিকে পৃথিবী বিদীর্ণ হওয়ার প্রতি মনোনিবেশ করার দাওয়াত দেয়। যেমন, ‘বৃষ্টির ফলে জীবনের উদ্ভব।

শপথ আসমানের, যা প্রদান করে আবর্তিত বৃষ্টি। শপথ পৃথিবীর, যা বিদীর্ণ হয় (বৃষ্টির কল্যাণে)। নিশ্চয় এটা (কোরান মাজিদ সত্য ও মিথ্যার মধ্যে) ফয়সালাকারী বাণী। আর তা উপহাসের বিষয় নয়। (আত-তারিক, ৮৬ : ১১-১৩)
এই আয়াতে আল্লাহ তাআলা একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় অবতীর্ণ করেছেন যা কোরান অবতীর্ণ হওয়ার পরও বহু শতাব্দী পর্যন্ত মানুষের অজানা ছিল। এই আয়াত যে ‘বৃষ্টির আবর্তন’ -এর কথা বলে তা ছিল আরব বেদুঈনদের কাছে সম্পূর্ণ অপরিচিত। এখন আমরা জানি যে, ভূপৃষ্ঠের উপরিভাগ ও সাগরের পানি সূর্যের তাপে বাষ্পীভূত হয়ে মেঘে রূপান্তরিত হয়, ঘনীভূত হয় এবং বৃষ্টি রূপে পুনরায় পতিত হয়। এভাবে আকাশ পৃথিবীকে সেই পানি ফিরিয়ে দেয় যা একটি নিত্য চক্রাবর্তে তার কাছে উঠে। এই বিষয়টি বর্ণনার পর কোরান মাজিদ মানব জাতিকে পৃথিবী বিদীর্ণ হওয়ার প্রতি মনোনিবেশ করার দাওয়াত দেয়। যেমন, ‘বৃষ্টির ফলে জীবনের উদ্ভব। কোরান মাজিদ অবশেষে মানব জাতিকে দাওয়াত দেয় তার যথার্থতা ও প্রাজ্ঞতা নিয়ে চিন্তা-ভাবনা করতে। এটিকে নিছক মনোরঞ্জনের বিষয় হিসেবে নেয়া মানুষের জন্য অনুচিত।

কাবা শরিফে আল্লাহ তাআলার নিদর্শন, কীভাবে?

কাবা শরিফে আল্লাহ তাআলার নিদর্শন, কীভাবে?

কাবা শরিফ মক্কায় অবস্থিত, যা খুব শুষ্ক। এর চারপাশে রয়েছে তরু-লতাহীন পাথুরে পর্বতমালা। মক্কা মরুভূমি হওয়ার কারণে তাতে পুরো বছর উল্লেখ করার মত তেমন কোনো বৃষ্টিপাতও হয় না। অধিকন্তু মক্কার ভেতরে কিংবা বাইরে কোনো পুকুর কিংবা হ্রদও নেই।
নিশ্চয় প্রথম ঘর, যা মানুষের (ইবাদতের) জন্যে স্থাপিত হয়েছে তা বাক্কায় (মক্কায়), যা বরকতময় এবং বিশ্ববাসীর জন্য হিদায়াত (নির্দেশিকা)। তাতে রয়েছে স্পষ্ট নিদর্শনসমূহ, (উদাহরণ স্বরূপ) মাকামে ইবরাহিম। আর যে তাতে প্রবেশ করবে সে নিরাপদ হয়ে যাবে। (আলে ইমরান, ০৩ : ৯৬-৯৭)
এই আয়াত অনুসারে কাবা শরিফ আল্লাহ তাআলার অনেক সমুজ্জ্বল নিদর্শনাবলি ধারণ করে আছে। একজন ঈমানদার পুরুষ কিংবা নারী যখন তাতে প্রবেশ করে তখন সে মুহূর্তেই সেসব আধ্যাত্মিক নিদর্শন অনুভব করতে পারে। অনুরূপভাবে কাবা শরিফের কিছু খুব সমুজ্জ্বল বাহ্যিক নিদর্শনও রয়েছে। এসব নিদর্শনের একটি হল জমজম কূপ, যা কাবা শরিফের অভ্যন্তরে অবস্থিত। হাদিসের ভাষ্য অনুসারে, জমজম কূপের পানি একজন মানুষের যে কোনো ইচ্ছা কিংবা প্রয়োজন পূরণে সাহায্য করে। এই হাদিসের ওপর ভিত্তি করে মুসলমানরা এই পানি ব্যাপকভাবে ব্যবহার করে।
উল্লেখ্য যে, কাবা শরিফ মক্কায় অবস্থিত, যা খুব শুষ্ক। এর চারপাশে রয়েছে তরু-লতাহীন পাথুরে পর্বতমালা। মক্কা মরুভূমি হওয়ার কারণে তাতে পুরো বছর উল্লেখ করার মত তেমন কোনো বৃষ্টিপাতও হয় না। অধিকন্তু মক্কার ভেতরে কিংবা বাইরে কোনো পুকুর কিংবা হ্রদও নেই। এ কারণে যে কেউ ধারণা করতে পারে, জমজম কূপ একটি সীমিত পরিমাণ পানি সরবরাহ করবে। কিন্তু বাস্তবতা হল, অসংখ্য মানুষ বিরতিহীনভাবে তার পানি ব্যবহার করছে।
প্রথমত: মক্কার অধিকাংশ অধিবাসী, জেদ্দার পার্শ্ববর্তী শহরসমূহ এবং তায়েফবাসীরা তাদের প্রাত্যহিক খাবার পানি ও রান্নার জন্য জমজমের পানির নিয়মিত সরবরাহের ব্যবস্থা করেছে।
দ্বিতীয়ত: সারা বছর অসংখ্য মানুষ কাবা শরিফ জিয়ারত করতে আসে। তারা খাবার, গোসল এমনকি ধোয়া-মোছার কাজেও ব্যাপকভাবে জমজমের পানি ব্যবহার করে।
তৃতীয়ত: তারা যখন তাদের বাড়ি-ঘরে ফিরে যায় তখন প্রচুর পরিমাণে পানি তাদের বন্ধু-বান্ধব ও পরিবারের সদস্যদের জন্য হাদিয়া স্বরূপ নিয়ে যায়।
চতুর্থত: রোজার মাসে দৈনিক কমপক্ষে পাঁচলাখ মানুষ কাবা শরিফে সমবেত হয়। এ সকল জিয়ারতকারী ত্রিশদিন যাবৎ এই পানি প্রচুর পরিমাণে ব্যবহার করে।
পঞ্চমত: হজ্বের মৌসুমে কাবা শরিফে বিশ লাখেরও অধিক লোকের আগমন ঘটে। এ সকল জিয়ারতকারী তাদের প্রাত্যহিক সকল প্রয়োজনে এই পানি ব্যাপকভাবে ব্যবহার করে এবং বাড়ি ফিরে যাওয়ার সময় প্রত্যেকে কমপক্ষে এক কনটেইনার করে পানি সঙ্গে নিয়ে যায়। বিস্ময়কর ব্যাপার হল, সারা বছর ধরে জমজম কূপের পানির এত প্রচুর ব্যবহার সত্ত্বেও তাতে কখনো পানি সল্পতা দেখা দেয় নি। এখনো পর্যন্ত কেউ ধারণাও করতে পারে না যে, মক্কার মত এমন ঊষর ও পাথুরে ভূমিতে এই নিঃসীম পানির উৎস কোথায়। এটি উপরোক্ত আয়াতে বর্ণিত কাবা শরিফে আল্লাহ তাআলার একটি উজ্জ্বল নিদর্শন।

কোরআনের প্রায় প্রতিটি সুরার শুরুতে ‘বিসমিল্লাহির রহমানির রাহিম’ নাজিল হয়েছে যে কারণে!

কোরআনের প্রায় প্রতিটি সুরার শুরুতে ‘বিসমিল্লাহির রহমানির রাহিম’ নাজিল হয়েছে যে কারণে!

বিসমিল্লাহির রহমানির রাহিম’-এর শানে নুজুল বা নাজিলের প্রেক্ষাপট সম্পর্কে হজরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস [রা] বলেছেন, রাসুল [সা] ‘বিসমিল্লাহির রহমানির রাহিম’ অবতীর্ণ হওয়া পর্যন্ত দুটি সূরার মাঝে পার্থক্য বিধান করতে পারতেন না তথা সূরার শুরু-শেষ বুঝতেন না।
‘বিসমিল্লাহির রহমানির রাহিম’ -এর অর্থ পরম করুণাময় অতিশয় দয়ালু আল্লাহর নামে শুরু করছি।
সুরা তাওবা ব্যতীত পবিত্র কোরআনে অবতীর্ণ সকল সূরা শুরুতে ‘বিসমিল্লাহির রহমানির রাহিম’ রয়েছে। কিন্তু কেনো সুরার শুরুতে বিসমিল্লাহির রহমানির রাহিম অবতীর্ণ করা হয়েছে- এর কারণ সম্পর্কে হযরত ইমাম আবু হানীফা [রহ] এবং মদিনার অন্যান্য ফোকাহায়ে কেরাম বলেছেন, মূলত ‘বিসমিল্লাহির রহমানির রাহিম’ সূরায়ে ফাতিহা কিংবা অপর কোনো সূরার অংশ বিশেষ নয় বরং বরকত লাভের উদ্দেশ্যে অথবা দুটি সূরার মাঝে পার্থক্য নির্ণয়ের লক্ষ্যে প্রতিটি সূরা বিসমিল্লাহ দ্বারা শুরু করা হয়েছে।
‘বিসমিল্লাহির রহমানির রাহিম’-এর শানে নুজুল বা নাজিলের প্রেক্ষাপট সম্পর্কে হজরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস [রা] বলেছেন, রাসুল [সা] ‘বিসমিল্লাহির রহমানির রাহিম’ অবতীর্ণ হওয়া পর্যন্ত দুটি সূরার মাঝে পার্থক্য বিধান করতে পারতেন না তথা সূরার শুরু-শেষ বুঝতেন না।

শনিবার, ১০ অক্টোবর, ২০১৫

কিছু আদিক্ষেতা

কিছু আদিক্ষেতা

গত রাতের লিখা চিঠিটা পোস্ট করা হয়্নি।
আজকাল নাকি ইমেইল আর এস এম এস এর যুগে এসব শুধুই আদিক্ষেতা।
হুম... আদিক্ষেতা বটে…
কিন্তু সেটা কি খুবই খারাপ?
আর একটু না হয় আদিক্ষেতা দেখালামই ।
তাতে কি এমন ক্ষতি বলতো!
এই আরেকটু আদিক্ষেতা দেখাব?
যদিও… এখন বর্ষাকাল নয়,
তবুও এখন কি ইচ্ছে করছে জান?
চোখ বন্ধ কর বলছি,
ঝুম বৃষ্টি,
রাস্তায় কেউ নেই
তুমি কাজল চোখে আমার সামনে দাঁড়িয়ে আছো,
আর আমি সেই কাজল গলে যাওয়া দেখছি।
গলে যাওয়া কাজল তোমার চোখ বেয়ে গালে এসে পড়ছে,
আর ঠোঁটে এসে পড়ার আগেই আমি তা পরম যতনে মুছে দিচ্ছি।

বাকিটুকু আজ আর বলতে পারব না।
তুমি বুঝে নিও।

বিখ্যাত মানুষের বোকামি

বিখ্যাত মানুষের বোকামি

তারা সবাই বড় মানুষ, বিখ্যাত মানুষ। দুনিয়াজোড়া তাদের সুনাম। তুমি হয়তো ভাবছ এমন মানুষ আবার বোকা হয় কী করে? বোকা তো আমাদের পল্টু। ও সকালবেলা ঘুম থেকে উঠে দাঁত ব্রাশ করার সময় পেস্ট খেয়ে বলে- দারুণ মজা!


আসলে ছোট তো তাই পল্টু না বুঝে এমন করে। কিন্তু আইনস্টাইন, সত্যজিৎ, শরৎচন্দ্র এরা তো ছোট নন। তাহলে তারা বোকা হবে কেন? আসলে জীবনে চলার পথে অনেক বুদ্ধিমান মানুষও অনেক সময় বোকার মতো কাজ করে ফেলেন। এতে অবাক হবার কিছু নেই। আবার এমনও ধরে নেয়া যায়, সে হয়তো তার বিবেচনায় সেরা কাজটিই করেছেন, কিন্তু আমি, তুমি ধরে নিচ্ছি, তিনি বোকার মতো কাজ করেছেন। এটা পরিস্থিতির ওপর অনেকটা নির্ভর করে। আর কেউ বোকার মতো কাজ করলেই যে ‘হাবাগোবা’ হয়ে যায় তা কিন্তু নয়।

ভালো কথা, আইনস্টাইন, সত্যজিৎ, শরৎচন্দ্র- এদের সবাইকে চেন তো? আইনস্টাইন বড় বিজ্ঞানী। সত্যজিৎ রায় চলচ্চিত্র নির্মাতা। ‘পথের পাঁচালী’ তিনিই তৈরি করেছিলেন। তোমরা এই সিনেমাটি না দেখলে অবশ্যই দেখে নেবে। শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় সাহিত্যিক। তোমাদের জন্য অনেক গল্প লিখেছেন। না পড়লে পড়ে নিও। তারপর ধরো স্যার আইজাক নিউটন। তিনিও বড় বিজ্ঞানী। অথচ তিনি কেমন বোকার মতো কাণ্ড করেছেন দেখ।

নিউটনের গবেষণাগারের দরজার ভাঙা অংশ দিয়ে একটি বিড়াল যাতায়াত করত। একদিন নিউটন লক্ষ করলেন বিড়ালটির বাচ্চা হয়েছে। ফুটফুটে বিড়াল ছানাটিকে নিউটনের বেশ ভালো লাগল। বাচ্চাটি যাতে অনায়াসে গবেষণাগারে যাতায়াত করতে পারে এ জন্য তিনি মা বিড়াল দরজার যে ভাঙা অংশ দিয়ে ঘরে ঢুকত তার পাশে কেটে ছোট্ট আরেকটি দরজা করে দিলেন। বড় ফুটো দিয়ে মা বিড়ালের সঙ্গে ছানাটিও যে ঢুকতে পারবে এ বিষয়টি নিউটনের মাথাতেই আসেনি। তিনি দুইজনের জন্য দুটো দরজা করে দিলেন।

এবার আইনস্টাইনের গল্পটি বলি। একবার এক সহকর্মী তাঁর কাছে টেলিফোন নাম্বার চাইলেন। আইনস্টাইন তখন টেলিফোন গাইডে নিজের ফোন নাম্বার খুঁজতে শুরু করলেন। এদিকে সময় নষ্ট হচ্ছে দেখে সহকর্মী বিরক্ত হয়ে বললেন, তুমি টেলিফোন নাম্বারটাও মনে রাখতে পার না?
এ কথা শুনে আইনস্টাইন বললেন, বোকার মতো কথা বলো না, যে জিনিস টেলিফোন গাইডে লেখা আছে, সেটা আমি মুখস্থ করতে যাব কেন?

কথা কিন্তু একদিক দিয়ে আইনস্টাইন ভুল বলেননি। তাই বলে তোমরা তোমাদের বাড়ির নাম্বার, বাবা-মা’র ফোন নাম্বার ভুলে যেও না। বিপদে দেখবে ওটাই কাজে দেবে। এবার সত্যজিৎ রায়ের ঘটনাটা বলি।  ‘কাঞ্চনজঙ্ঘা’ সিনেমা তৈরির সময় তিনি একটি দৃশ্যের জন্য পাখি খুঁজছিলেন। এমন সময় এক বয়স্ক ব্যক্তি এসে জিজ্ঞেস করলেন, কী খুঁজছেন?
: হিমালয়ান বার্ড।
: হিমালয়ান বার্ড বলে তো কিছু নেই!
আগন্তুকের মুখে এ কথা শুনে সত্যজিৎ রায় খুব বিরক্ত হলেন। সহকারীকে ইশারায় বললেন, লোকটিকে সড়িয়ে নিতে।
সহকারী ঠেলেঠুলে লোকটিকে সড়িয়ে দিয়ে এসে যা বললেন তাতে নিজের বোকামির জন্য সত্যজিৎ রায় খুবই বিব্রত হলেন। কারণ ওই ব্যক্তি আর কেউ নন, পাখি বিশেষজ্ঞ সলিম আলি।

যিনি পাখি নিয়ে গবেষণা করে বিখ্যাত হয়েছেন তাকেই কিনা পাত্তা দিলেন না সত্যজিৎ রায়। এটা বোকামি নয়? এমন বোকামি শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ও করেছেন। একবার তিনি থিয়েটারে নাটক দেখতে এসেছেন। নাটক শেষে আবিষ্কার করলেন তাঁর একপাটি জুতা নেই। তিনি মনে মনে ভাবলেন, চোর ব্যাটা ভেবেছে আমি এ পাটিটাও থুয়ে যাব, আর সে পড়ে এসে নিয়ে যাবে। তা হবে না। শরৎচন্দ্র ওই একপাটি জুতা বাসায় ফেরার সময় গঙ্গায় ছুড়ে ফেলে দিয়ে আসলেন। কিন্তু পরদিন সকালে হল ঝাড়ু দেওয়ার সময় একপাটি জুতা পাওয়া গেল। হলের মালিক জুতা শরৎচন্দ্রের কাছে পৌঁছে দিলেন। সেই একপাটি জুতা ফিরে পেয়ে নিজের বোকামির জন্য শরৎচন্দ্র বেজায় আক্ষেপ করতে লাগলেন।

তারপর ধরো এ কে ফজলুল হকের কথা বলি। তিনি বিখ্যাত রাজনীতিক। সমাজের উন্নতি কিসে হবে, কীভাবে মানুষ উপকৃত হবে এই ছিল তার রাজনৈতিক আদর্শ। তার কাছে যে সমস্যা নিয়ে যেত তিনি সমাধান করার ব্যবস্থা করতেন। তিনি তদবিরকারীর সামনেই টেলিফোনে ব্যবস্থার নির্দেশ দিতেন। একদিন এক তদবিরকারীর সামনেই ফোনে নির্দেশ দিলেন সমস্যার সমাধান করে দেয়ার জন্য। এমন সময় আরেকজন ঘরে ঢুকতেই ফজলুল হক খানিকটা বিরক্ত কণ্ঠে বললেন, তোমার আবার কী সমস্যা?
স্যার আমি টেলিফোন অফিস থেকে আসছি। আগন্তুক বলল, আপনার লাইনটা গতকাল থেকে কাটা। ওটা ঠিক করতে এসেছি। এবার বোঝো কাণ্ড!

ভালোবাসি বলেই তো নাকি?

ভালোবাসি বলেই তো নাকি?

এই যে আমি তোর দিকে চেয়ে থাকি
এই যে আমি দিনরাত্রি তোকে দেখি
তুই সুন্দর বলেই তো নাকি?
এই যে এত সারাদিন ঝগড়াঝাটি
ছুতায় নাতায় কথায় কথায় খুনসুটি
বুকের মধ্যে থাকিস বলেই তো নাকি?
এই যে এত মাথায় মাথায় ঠোকাঠুকি
কথায় কথায় অর্থহীন বকাঝকি
মনের মিল আছে বলেই তো নাকি?
এই যে ঘরে মিথ্যে বলে বাইরে বেরোই
ঘড়ির কাঁটা বন্ধ করে পথ চেয়ে রই
ভালো লাগে বলেই তো নাকি?
এই যে মেলায় যাবার জন্য ডাকিস
ভিড়ের মধ্যে শক্ত হাতে ধরে রাখিস
হারিয়ে যাবার ভয়েই তো নাকি?
এই যে এত ছলাকলা বুকের মধ্যে আগুন জ্বলা
‘ভালোবাসি’ এই কথাটি আজো যে যায়নি বলা
ভালোবাসি বলেই তো নাকি?

তোমার আমার ভালবাসা

তোমার আমার ভালবাসা

তোমার আমার ভালবাসা- এর ছবি

যে মানুষটা তোমাকে প্রচন্ড পরিমাণে ভালোবাসে
সেই মানুষটাকে ইচ্ছা করে কখনো অবহেলা করো না ...
হ্যাঁ, তুমি অবহেলা করলে সে কষ্ট পাবে ঠিকই ...
কিন্তু কষ্ট পেয়েও সে তোমাকে ক্ষমা করে দিবে
তোমার কাছেই ফিরে আসবে ...
তুমিই তার দুর্বলতা - এটা জেনে ইচ্ছা করে তাকে কষ্ট দিও না ...!!
"যত যা-ই করি, ও তো দিন শেষে আমার কাছেই আসবে" - এইটা চিন্তা করে কারো আবেগ নিয়ে নিষ্ঠুরের মত খেলার অধিকার তোমার নেই ...
কারো দুর্বলতা জেনে নিয়ে তাকে আঘাত করে মজা পাওয়ার অধিকার তোমার নেই ...!!
কারণ যতটুকু সময় তুমি মানুষটাকে স্বেচ্ছায় অবহেলা করছো বা দূরে থাকছো আর কষ্ট দিচ্ছো, ঠিক ততটুকু সময়ই সে শিখছে এবং জানছে কিভাবে তোমাকে ছাড়াই বেঁচে থাকা যায় ...!!
একদিন সে শিখে ফেলবেই তোমাকে ছাড়া বাঁচার উপায় ...
একদিন সে জেনে যাবেই তোমাকে ছাড়া বাঁচাটা অসম্ভব না ...
সেদিন সে আর ফেরত আসবে না ...
তোমার দেয়া টুকরো টুকরো কষ্ট একসাথে তুমি ফেরত পেয়ে যাবা সেদিন ...
বুঝতে পারবা, কি ভয়ঙ্কর ভুলই না ভেবেছিলে তুমি এতদিন ...
সেদিন অনেক দেরি হয়ে যাবে ... অনেক দেরি... !!

আংশিক রুপকথার গল্প

 আংশিক রুপকথার গল্প







মহুয়ার বিয়ে হয়েছে তিনমাস। লোকটি যে বিয়ের পরদিন সকালেই গায়েব হয়েছে, আর আসে নি। মহুয়ার ব্যস্ত জীবন কেটেই যায়, থেমে নেই কিছুই। শুধু যখন ঘরে ফেরে তখন ভীষণ শুন্যতাবোধ করে। প্রতিদিনই ভাবে আজ হয়ত আসবে, কিন্তু আসে না মহুয়ার বদ জামাই।
মহুয়া ঘরে ফিরে দেখে টিভিরুমের সোফায় পাশের বাসার পিচ্চিদুটো বসে আছে। পিচ্চিদুটো প্রায়ই আসে মহুয়ার কাছে গল্প শোনার জন্য। অনেক সুন্দর করে গলপ পড়তে পারে মহুয়া। মহুয়ার শাশুড়িও পিচ্চিদুটোকে অনেক আদর করেন। পিচ্চি দুটোর মধ্যে ভাইটা ছোট ও বোনটা বড়। জেমস ও জেনি। ইংলিশ মিডিয়ামে পড়ে ওরা। জেমসের বয়স ১০ ও জেনির বয়স ১২।
জেমস বলল, "মাম আজ আমাদের তোমার কাছে সেন্ড করেছে।"
জেনি বলল, "আজ রাতে আমরা তোমার সাথে ঘুমুবো।"
পিচ্চিগুলো অন্য পিচ্চিদের মত হুড়োহুড়ি করে না, একটা ভারিক্কী ভাব নিয়ে বসে থাকে। ওদের চেহারা দেখলে মনে হয় সবজান্তা। রাতে মহুয়ার দুপাশে দুজন শুয়ে পড়ল।
মহুয়া বলল, "আজ আমি তোমাদের The Little Mermaidএর গল্প শোনাবো।"
জেমস বলল, "উহু, আন্টি, আমাদের True Love's Kissএর গল্প শোনাও।"
মহুয়া ভাবল, ইংলিশ মিডিয়ামের পিচ্চিগুলো কি সেয়ানা। ওদের বয়সে মহুয়া kissও বুঝতো না। মহুয়া বলল, "True Love's Kissএর গল্প?"
"হুম", বলল জেনি।
"Sleeping Beauty শোনাই তাহলে?"
জেমস বলল, "Oh no, আন্টি, একই গল্প কতবার? এর আগে কম করে হলেও বিশবার শুনেছি।"
"তাহলে Beauty & the Beast শোনাই?"
জেনি বলল, "ওটাও তো শুনেছি অনেকবার।"
মহুয়া বলল, "Snow White?"
পিচ্চিদুটো একসাথে বলল, "No"
"The Frog Prince?"
আবার একসাথে বলল, "No."
এখন কি গল্প শোনাবে মহুয়া ওদের? মহুয়ার চোখজুড়ে ঘুম। আর পিচ্চিদুটোর ঘুমোনোর নাম নেই। হঠাত করে মহুয়া ভাবল, হুম, গল্প পয়দা করবে ও।
মহুয়া বলল, "Lord of Insomnia?"
জেমস ও জেনি একসাথে মহুয়ার দিকে তাকাল, তারপর নিজেদের দিকে তাকাল। একসাথে বলল। "বলো। বলো।"
জেমস বলল, "Insomnia মানে কি?"
"ঘুম না হওয়াকে Insomnia বলে।"
জেনি বলল, "ও"
দুজন একসাথে আবার বলল, "বলো। বলো।"
পিচ্চিদুটোকে আবার গল্প শোনাতে হয় ইংলিশে। মহুয়া বলা শুরু করল-
"In heaven, there was a goddess who used to sleep all day long & at night she used to come down to earth to make people sleep. She was the goddess of sleep. One day in her dream she found a guy who was full of anger & agony. Because of that guy her dreams became nightmares. So she decided to find him. When she saw that guy with red eyes, she came to know that he's the lord of insomnia of Hell. She felt pity for his red eyes & sleeplessness. She thought, he must be the unhappiest man deprived of lovely dreams. From her pity love blossomed. And she fall in love. She met him, the arrogant lord ignored her as she is from heaven. But she clung to him like a magnet. The lonely lord of insomnia couldn't ignore her. So he let her stay her beside him. But they were from 2 worlds. She only stayed to him at night during their visit on earth. As she fall in sleep while accompanying him, his sleepless eyes watched her. He felt something that he never felt before. He then kissed her. For the first time in his whole life he felt sleepy, fall in sleep. At that moment, she woke up. From the touch of his lips, her divine power is damaged as well as his hellish ability. She waited for him to wake up. When he woke up, she asked why he kissed her. Her power is fading from that kiss. Lord said, 'I think, that's great. This pounding heart is better than any power." He kissed her again until all their power were lost. Both of them were kicked out from heaven & hell as they became human. They were sent to earth, they lived happily ever after. They decided that if any day they regain their power, they would do the same."
পিচ্চিদুটো হাততালি দিল।
মহুয়া বলল, "এর জন্য পৃথিবীর সবাই এখন ঠিকমতো ঘুমায়। তবে যারা ঠিকমতো ঘুমায় না, তাদের জন্য Lord of Insomnia ও Goddess of Sleepএর পাওয়ার ফিরে যেতে পারে। ওরা আবার আলাদা হয়ে যাবে। তোমরা কি তা চাও?"
"No. Never" একসাথে বলল দুজন।
"আচ্ছা, এখন থেকে ঠিকমতো ঘুমোবে। কেমন?"
"ওকে"
"তাহলে এখন ঘুমোও"
মহুয়া ভাবল, ওয়াও। পিচ্চিদের গল্প বলতে বলতে সত্যিই অনেক সুন্দর একটা গল্প হয়ে গেছে। পিচ্চিদুটো ঘুমিয়ে পড়তেই মহুয়া কাগজ কলম নিয়ে লিখে ফেলল প্লট। পরে সুন্দর করে সাজাতে হবে মহুয়ার রূপকথার গল্পটিকে, বেশ আনন্দ হচ্ছে। প্লটটি লিখেই ঘুমিয়ে পড়ল মহুয়া।
ভোরের দিকে মহুয়ার মনে হল, ঠোঁটে নরম কিছুর ছোঁয়া লেগেছে। মহুয়ার ঘুম ভেঙ্গে গেল, দেখল, লোকটা মাথা ঝুঁকে তাকিয়ে আছে। মহুয়া বিস্ফোরিত চোখে তাকিয়ে রইল। মিনিটখানেকবাদে মহুয়া বলল, "দুটো বাচ্চা দু'পাশে আমার।"
লোকটা বলল, "ওরা ঘুমুচ্ছে। তাছাড়া ওরা এসব হর-হামেশাই দেখে।"
মহুয়া বলল, "এর আগেও আপনাকে এভাবে দেখেছে?"
"তোমার এই প্রশ্নের উত্তর আমি দেব না।"
"কেন?"
"By the way, গল্প লিখেছ না প্লট?"
"কোথায়?"
"ঐ যে Lord of Insomnia"
"প্লট।"
"তা ইংলিশে লিখেছো কেন? True Love's Kiss বাংলায় অদ্ভুত শোনাবে, তাই? 'সত্যিকার ভালবাসার চুম্বন' অথবা 'প্রকৃত ভালবাসার চুমু'।"
"মজা নিচ্ছেন?"
"উহু, Goddess of Sleepএর পাওয়ার ফিরে আসার আগেই শেষ করে দিলাম।"

ভালবাসার গল্প

ভালবাসার গল্প






“কি মামা? ঘুমাও নাকি এখনো ?”
-ভকভক করে বেনসনের ধোঁয়া ছেড়ে প্রশ্ন করল নাভিদ ।
“নাহ ! কই আর ঘুমাই ! বিছানায় হাডুডু খেলি ।”
—ছুটির দিনে ‘ভোর’ দশটায় ঘুম ভাঙানোর কারণে বিরক্ত হয়ে উত্তর দিলাম।
“আরে মামা! রাগ হও ক্যান ? আজকে তো গুরুর জন্মদিন ?”
—স্বভাবসুলভ ‘কিছুই হয় নাই’ ভঙ্গিতে বলল নাভিদ ।
আমি খানিকটা ইতস্তত বোধ করলাম । নাভিদের স্বভাব , লালন থেকে লিঙ্কিন পার্ক প্রায় সবাই তার কাছে গুরু । আজকে আবার তাদের মধ্যে কোন গুরুর জন্মদিন , কে জানে ? ভয়ে ভয়ে জিজ্ঞাসা করলাম-
“কোন গুরু?”
নাভিদ আবার সর্বদাই তার ‘গুরু’-দের ব্যাপারে দুই ফারেনহাইট বেশি সিরিয়াস । গম্ভীর স্বরে বলল –
“শে গেভারা , সবাই যার ভুল উচ্চারণ করে চে গুয়েভারা বলে ।”
এতোটুকু বলে সে আবার খানিকটা সময় নিল ভকভক করে সিগারেটের ধোঁয়া ছাড়ার জন্য ।
আমি প্রমাদ গুনলাম । মাসখানেক আগে আমাদের হাতে চে গুয়েভারার একটা জীবনী আসে । ওটা পড়েই সবার মাথায় সুমহান বিপ্লবের পোকা ঢোকে । কিছুদিন আগে দলবেঁধে চে-র ছবিওয়ালা টি-শার্ট আর গেঞ্জি কিনে নিয়ে আসা হয় , যার বেশিরভাগগুলোতেই “মানুষের মুক্তির চিরন্তন চেতনা” এরনেস্তো চে গুয়েভারা ঠোঁটের ফাঁকে সিগারেট নিয়ে সৌম্যদৃষ্টিতে তাকিয়ে আছেন । এসব আবোতাবোল ভাবছিলাম এমন সময় রুমে এসে ঢুকল রিফাত । রিফাতের গায়েও নাভিদের মতোই চে-গুয়েভারার ছবিওয়ালা ট-সার্ট ।
রিফাত , নাভিদ আর আমি – আমরা তিনজন রুমমেট । নাভিদ ছেলেটা যেকোন কিছুতেই ব্যপক আশাবাদী । যেসব পরীক্ষায় আমরা নেহায়েৎ পাশ করলেই বাঁচি , সেসব পরীক্ষায় সে এ প্লাস পাবে বলে আশার বসতি গড়ে । আর এটা বলাই বাহুল্য সেই বসতি ভাঙতে সময় লাগে না । কিন্তু তবুও নাভিদ ভাঙে তো মচকায় না । অপরদিকে রিফাতের দাবী , জগতে কেবল দুইটা জিনিসই ক্রমবর্ধমান । এর মধ্যে একটা হল এনট্রপি , আরেকটা হল হতাশা । আর এই দুই বিপরীত প্রবৃত্তির মানুষের সাথে বসবাস করতে গিয়ে কেমন যেন একটা ‘অনিকেত প্রান্তর’-এ ঝুলতে থাকি আমি । না পারি প্রবল আশায় বুক বাঁধতে , আবার না পারি তীব্র হতাশায় শ্লাঘা ত্যাগ করতে ।

যাই হোক রিফাত রুমে ঢুকেই হতাশার ঝাঁপি খুলে বসল –
“এই যে আজকে যারা চে গুয়েভারার জন্মদিন নিয়ে এতো মাতামাতি করছে , বিপ্লব আর পরিবর্তনের তুবড়ি ছুটিয়ে মুখ দিয়ে ফেনা তুলে ফেলছে , তাদের মধ্যে কতোজন আসল ইতিহাস জানে ? আমার তো মনে হয় ঠিকভাবে জিজ্ঞাসা করলে অনেকে উনার দেশটাও বলতে পারবে না । ”
এসব শুনে নাভিদ তার আশার ডালি উজাড় করে দিয়ে বলল –
“তোরে কইসে ? হয়তো কয়েকজন জানবে না । তাদের জানা না জানাতে কিছু আসে যায় না। কিন্তু অধিকাংশই জানবে ।” ।
এই নিয়ে দুজনের বাকবিতন্ডা যখন ঊর্ধ্বগামী ঠিক তখনই নাভিদের তরফ থেকে একটা বাজির প্রস্তাব আসে । প্রস্তাব হল তারা ঠিক এই মুহূর্তে ক্যান্টিনে যাবে এবং কমপক্ষে ত্রিশ থেকে পঁয়ত্রিশজনকে চে সম্পর্কে কিছু বেসিক প্রশ্ন জিজ্ঞাসা করবে । তারা উত্তর দিতে পারলে নাভিদ জিতবে , আর না পারলে রিফাত হারবে । কিন্তু বাজি ধরা হবে কিসের উপর ?
ক্ষণকয়েক বাদে সিদ্ধান্ত হল বাজি ধরা হবে এক প্যাকেট বেনসনের উপর । বিশ্ববিদ্যালয় জীবনের মোটামুটি বেশ উচুদরেরই বাজি ।
যাই হোক তাদের সাথে আমিও গিয়ে বসলাম ক্যান্টিনে । কে জিতে বাজিটা দেখা দরকার ! এখন প্রশ্ন হল ঠিক কাদেরকে প্রশ্নগুলো করা হবে । এ ব্যপারে দুজনে বেশ কিছুক্ষণ উঁচু স্বরের বাক্যালাপ শেষে সিদ্ধান্ত নিল অর্ধেক মানুষ বাছাই করবে নাভিদ , আর বাকি অর্ধেক রিফাত ।
প্রথমেই ক্যাম্পাসে পরিবর্তনের ছোঁয়া এনে দিতে সদা তৎপর এক তরুণকে ডাকা হল । এই তরুণকে আমি ব্যক্তিগতভাবে চিনি । সে অনলাইনের জগতের একজন ছোটখাটো সেলিব্রেটি । সমাজের যাবতীয় অসমীচীনতা নিয়ে লেখা তার বিশাল বিশাল স্ট্যাটাসগুলোতে প্রায়শই লাইকের বন্যা বসে । তরুণকে প্রশ্ন করা হয় , চে গুয়েভারার জন্ম কোন দেশে ? আমি মোটামুটি নিশ্চিত ছিলাম এই প্রতিবাদী তরুণ অবশ্যই পারবে । কিন্তু আমাকে আর নাভিদকে অবাক করিয়ে দিয়ে সে উত্তর দিল আফ্রিকা । আমরা তিনজনই খানিকটা নড়েচড়ে বসলাম ।
এরপর অফলাইনের জগতে বিভিন্ন মিছিলের স্লোগানে দেশ পরিবর্তনে দৃঢ় অঙ্গীকারবদ্ধ আরেক বিপ্লবী তরুণের কাছ থেকে জানা গেলো চে গুয়েভারা দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের একজন তেজী যোদ্ধা ! এভাবে প্রায় ত্রিশজনকে প্রশ্ন করা শেষ । ফেসবুকে চে-এর ছবি কভার ফোটো দেয়া ছেলে থেকে শুরু করে তাঁর ছবিওয়ালা গেঞ্জি পড়ে তাঁর স্টাইলে সিগারেট ফুঁকতে থাক ছেলেটা , বিশ্বের প্রায় সব বিশয় নিয়ে গুরুগম্ভীর কথা বলা ছেলেটা থেকে শুরু করে নারী অধিকারে সোচ্চার হয়ে জ্বালাময়ী ভাষণ দেয়া মেয়েটা --- সকলের বিমূর্ত উত্তরে আমাদের রীতিমতো ‘তবদা’ লেগে যাওয়ার দশা । নাভিদ বাজিতে হেরে হতাশ , রিফাতকে জিতেও তেমন খুশি হতে দেখা গেলো না ।
এমন সময় নাভিদ একটা ছেলেকে ডাকলো । ছেলেটার চুল তেল দিয়ে পরিপাটি করে আঁচড়ানো , বড় কার্বন ফ্রেমের চশমা । মোটের উপর , দেখলেই বুঝা যায় এই ছেলে বিপ্লবের ধারেকাছেও নাই । ছেলেটার সম্পর্কে অল্প বিস্তর যতদূর জানি , তাতে বিপ্লব শব্দটার ধারকাছ দিয়ে তাঁর থাকার কথা নয় । সিস্টেম পরিবর্তন নয় বরং সিস্টেমে খাপ খাওয়ানোই এদের লক্ষ্য হয়ে থাকে । নাভিদ তাকে জিজ্ঞাসা করল চে গুয়েভারার নাম শুনেছে কিনা । ছেলেটা নির্লিপ্ততা জড়ানো কন্ঠে বলল –
“হুম চিনি তো । প্রায়ই দেখা হয় ।”
আমরা তো পুরো থ হয়ে গেলাম । বলে কি পাগলে ? আমরা জানতে চায়লাম তার মাথা থিক আছে কিনা !
ছেলেটা একটু হেসে বলল –
“ক্যান্টিনের টেবিল বয় মামুনকে চেনো ? ছেলেটা সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত এখানে কাজ করে আর রাতে নৈশ স্কুলে পড়ে । গত বার্ষিক পরীক্ষায় পঞ্চম হয়েছে সে । আমাদের ডিপার্টমেন্টের দপ্তরী রফিক মিয়াঁকে কে চেনো ? সকাল থেক বিকাল পর্যন্ত দপ্তরীর কাজ করে রাতে গিয়ে আবার চায়ের টং চালায় একটা । তার এক ছেলে এবার এস,এস,সি, পরীক্ষায় গোল্ডেন এ প্লাস পেয়েছে । হাসান আলীকে চেনো ? রিকশা চালায় । ঘরে চারটা ছেলেমেয়ে আছে । তবুও রাস্তা থেকে কুরিয়ে পাওয়া এক মেয়েকে মানুষ করছে , পড়ালেখা শেখাচ্ছে ।
আমার কাছে এদের সহ এরকম আরো অনেকের জীবনটাই একটা বিপ্লব মনে হয় । প্রতিটা পদক্ষেপই এক একটা প্রতিবাদী মিছিলের তীব্র শ্লোগান । তাই চে-এর সাথে আমার হরহামেশাই দেখা হয় হয় , পরিচয় হয় , কথা হয় । হয়তো তোমাদেরো হয় , কিন্তু তোমরা পাশ কাটিয়ে এড়িয়ে যাও । তোমরা যে ধরেই নিয়েছো ওখানে তাঁকে তোমরা খুজবে না । ”
এই কথাগুলো বলেই সূর্যটাকে ছাতা বানিয়ে রোদের পথে বেরিয়ে গেলো ছেলেটা ।
নাভিদ উঠে গেলো কয়েক সেকেণ্ড পর , আর তারপর রিফাতও । মিনিট পাঁচেক পর দুজনেই আবার ফিরে এলো । দুজনের হাতেই ১৭০ টাকা দামের দুটো বেনসনের প্যাকেট । একই বাজিতে দুজনের একসাথে হেরে যাওয়ার ঘটনা বোধহয় এই প্রথম ।
“ছেলেটা কে রে ?” চেয়ার টেনে বসতে বসতে প্রশ্নটা করল নাভিদ ।
“চে ! চে গুয়েভারা ! বাবা কৃষক , মা অসুস্থ । গ্রামের বাড়িতে থাকে স্কুল পড়ুয়া ছোট ভাইটার সাথে । ও টিউশন করে নিজেকে চালায় , সেইসাথে পরিবারটাকেও । ” –
রোদকে মাড়িয়ে দিয়ে এগিয়ে যাওয়া ছেলেটার পথের দিকে তাকিয়ে বললাম আমি ।

মঙ্গলবার, ৬ অক্টোবর, ২০১৫

বীর্য মেরুদন্ড ও বক্ষ পাজরে অবস্থিত

বীর্য মেরুদন্ড ও বক্ষ পাজরে অবস্থিত

১৪০০ বছর আগেই মানব শরীরে বীর্য্যের অবস্থান সম্পৰ্কে কুরআনূল কারীমে উল্লেখিত হয়েছে। অথচ এই যুগের চিকিৎসা বিজ্ঞানীরা ওটাই বলে বাহাদূরী করেন যাহা মহান আল্লাহ ১৪০০ বছর আগেই বলে দিয়েছেন।কিসের এত বাহাদূরী আমাদের? আমরা সৃষ্টি হয়েছি সবেগে স্খলিত পানি বা বীর্য থেকে।মহান আল্লাহ বলেছেনঃ"মানুষের দেখা উচিত কি বস্তু থেকে সে সৃষ্টি হয়েছে। সে সৃষ্টি হয়েছে সবেগে স্খলিত পানি বা বীর্য থেকে। যাহা নির্গত হয় মেরুদন্ড ও বক্ষ পাজরের মধ্য থেকে। নিঃশ্চয় তিনি (আল্লাহ) তাকে ফিরিয়ে নিতে সক্ষম।"***সূরা আত্ব-তারিক্বঃ আয়াতঃ ৮৬:৫-৮।অপর একটি আয়াতে (ওহীর মাধ্যমে কুরআনে নাযিলকৃত দ্বিতীয় আয়াত) মহান আল্লাহ বলেছেনঃ"তিনি (আল্লাহ) মানুষকে সৃষ্টি করেছেন জমাট রক্ত থেকে।"***সূরা আলাক্বঃ আয়াতঃ ৯৬:২।


নারীর সাথে পুরুষের এবং পুরুষের সাথে নারীর সাদৃশ্যপূর্ণ বেশভূষা গ্রহণ

নারীর সাথে পুরুষের এবং পুরুষের সাথে নারীর সাদৃশ্যপূর্ণ বেশভূষা গ্রহণ



“যেসব পুরুষ নারীর সাথে এবং যেসব নারী পুরুষের সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ বেশভূষা গ্রহণ করে তাদের উপর আল্লাহর অভিসম্পাত।”
আরো উল্লেখ্য, পুরুষ কর্তৃক নারীর এবং নারী কর্তৃক পুরুষের কন্ঠস্বর অনুকরণও এর আওতাভুক্ত। নারী যখন পুরুষের মত আঁটসাঁট, পাতলা ও শরীরের আবরণযোগ্য অংশ অনাবৃত থাকে এমন পোশাক পরিধান করে, তখন সে পুরুষের সাথে সাদৃশ্য অবলম্বন করে এবং অভিসম্পাতের যোগ্য হয়। তার এ আচরণ যদি তার স্বামী মেনে নেয় এবং তাকে এ থেকে বিরত না রাখে, তাহলে সেও অভিসম্পাতের যোগ্য হবে। কেননা স্ত্রীকে আল্লাহর আদেশের অনুগত রাখতে এবং তার নাফরমানী থেকে বিরত রাখতে সে আদিষ্ট।
মহান আল্লাহ বলেছেনঃ “হে ঈমানদারগণ! তোমরা নিজেদেরকে এবং তোমাদের পরিবার পরিজনকে জাহান্নাম থেকে রক্ষা কর।” অর্থাৎ তাদেরকে সদাচারণ শিক্ষা দাও, আল্লাহর আনুগত্য করতে আদেশ দান কর এবং আল্লাহর নাফরমানী থেকে বিরত রাখ। যেমন তোমাদের নিজেদের ক্ষেত্রে এসব যেমন প্রয়োজনীয় তেমনি তাদের ক্ষেত্রেও। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘তোমাদের প্রত্যেকেই দায়িত্বশীল আর সবাই তোমরা জিজ্ঞাসিত হবে নিজ দায়িত্ব সম্পর্কে। ইমাম একজন দায়িত্বশীল; তিনি তাঁর দায়িত্ব সম্পর্কে জিজ্ঞাসিত হবেন। পুরুষ দায়িত্বশীল তার পরিবারের; সে জিজ্ঞাসিত হবে তার দায়িত্ব সম্পর্কে। মহিলা দায়িত্বশীল তার স্বামীর গৃহের (তার সম্পদ ও সন্তানের); সে জিজ্ঞাসিত হবে তার দায়িত্ব সম্পর্কে। ভৃত্যও একজন দায়িত্বশীল, সে জিজ্ঞাসিত হবে তার মুনিবের সম্পদ সম্পর্কে। (এককথায়) তোমরা সবাই দায়িত্বশীল আর সবাই জিজ্ঞাসিত হবে সে দায়িত্ব সম্পর্কে।’ [সহীহ বুখারী : ৭১৩৮; তিরমিযী : ১৭০৫]
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আরো বলেছেন, “পুরুষরা যখন স্ত্রীদের আজ্ঞাবহ হবে, তখন পুরুষরা ধ্বংস হবে।” (মুসলিম)
এ হাদীস থেকে অবগত হওয়া যায় যে, নারীর শাসনকর্ত্রী হওয়াও পুরুষের সাথে সাদৃশ্য অবলম্বনের পর্যায়ভুক্ত এবং পুরুষ কর্তৃক নারীর আজ্ঞাবহ হওয়াও নারীর অনুকরণের পর্যায়ভুক্ত।
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, “দু’ শ্রেণীর মানুষ জাহান্নামী হবে- যারা গরুর লেজ সদৃশ বেত দ্বারা মানুষকে প্রহার করে এবং যে সব নারী এত পাতলা পোশাক পরিধান করে যে তার ভেতর দিয়ে শরীরের অংশ দেখা যায় এবং অহংকারীর বেশে হেলে দুলে পথ চলে। এ নারী জান্নাতের সুঘ্রাণও পাবে না, যা বহুদূর থেকে পাওয়া যায়।” (মুসলিম)
হযরত নাফে’ রাহিমাহুল্লাহ থেকে বর্ণিত, একদিন হযরত ইবনে উমার ও আবদুল্লাহ ইবনে আমর হযরত যুবাইর (রাদিয়াল্লাহু আনহুম) এর কাছে ছিলেন। এমতাবস্থায় এক মহিলা ঘাড়ে ধনুক বহন করে মেষ পাল তাড়াতে তাড়াতে এগিয়ে এল। আবদুল্লাহ ইবনে উমার রাদিয়াল্লাহু আনহুমা তাকে জিজ্ঞেস করলেন;“তুমি পুরুষ না মহিলা? সে বলল; “মহিলা”। তখন তিনি আব্দুল্লাহ ইবনে আমরের দিকে তাকালে তিনি বললেন; আল্লাহ তায়ালা স্বীয় নবীর পবিত্র মুখ দিয়ে পুরুষদের সাথে সাদৃশ্য অবলম্বনকারী মহিলাদেরকে এবং মহিলাদের সাথে সাদৃশ্য অবলম্বনকারী পুরুষদেরকে অভিসম্পাত করেছেন।
আর যে সমস্ত কাজের জন্য নারীদেরকে অভিসম্পাত করা হয় তা হচ্ছে বাইরে চলাফেরার সময় দেহের সৌন্দর্য ও গহনাপত্র প্রদর্শন, সুগন্ধি দ্রব্য গায়ে বা কাপড়ে মেখে চলা এবং খাট, আঁটসাঁট ও পাতলা পোশাক পরা, যা দ্বারা সতর ঢাকে না ও পর্দা হয় না। এ সবই তাবাররুজের অন্তর্গত। যার বিরুদ্ধে আল্লাহ ও তাঁর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কঠোর সমালোচনা করেছেন। বর্তমান যমানায় অধিকাংশ মহিলা এসবে লিপ্ত রয়েছে বলেই রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন; “আমি মি’রাজ রজনীতে জাহান্নাম দেখেছি এবং এর অধিকাংশ অধিবাসী মহিলা।”

যুলুম বা অত্যাচার করা

যুলুম বা অত্যাচার করা






যুলুম বা অত্যাচার বিভিন্ন ধরণের হয়ে থাকে। এর মধ্যে সবচেয়ে অধিক প্রচলিত রূপ হচ্ছে
মানুষের সম্পদ হরণ,
জোর পূর্বক অন্যের সম্পদ ছিনিয়ে নেয়া,
মানুষকে প্রহার করা,
গালিগালাজ করা,
বিনা উস্কানীতে কারো উপর আক্রমণ
এবং আর্থিক, দৈহিক ও মর্যাদার ক্ষতিসাধন
এবং দুর্বলদের উপর নৃশংসতা চালানো ইত্যাদি।
এ সম্পর্কে পবিত্র কুরআনে সূরা ইবরাহীমে আল্লাহ তায়ালা বলেন,
“যালিমদের কর্মকাণ্ড সম্পর্কে আল্লাহকে কখনো উদাসীন মনে করো না। আল্লাহ এদেরকে শুধু একটি সুনির্দিষ্ট দিন পর্যন্ত বিলম্বিত করেন,
যেদিন চক্ষুসমূহ বিস্ফোরিত হবে,
তারা মাথা নিচু করে উঠিপড়ি করে দৌড়াতে থাকবে,
তাদের চোখ তাদের নিজেদের দিকে ফিরবে না
এবং তাদের হৃদয়সমূহ দিশাহারা হয়ে যাবে।
মানুষকে আযাব সমাগত হওয়ার দিন সম্পর্কে সাবধান করে দাও।
সেদিন যুলুমবাজরা বলবে; হে আমাদের প্রভূ ! অল্প কিছুদিন আমাদেরকে সময় দিন,
তাহলে আমরা আপনার দাওয়াত কবুল করে রাসূলদের অনুসরণ করব।
তোমরা কি ইতিপূর্বে কসম খেয়ে খেয়ে বলতে না যে তোমাদের পতন নেই?
যারা নিজেদের উপর যুলুম করেছে, তোমরা তো তাদের বাসস্থানে বাস করেছ
এবং সেসব যালেমের সাথে আমি কেমন আচরণ করেছি,
তা তোমাদের কাছে সুস্পষ্ট হয়ে গেছে।
উপরন্তু আমি তোমাদের জন্য অনেক উদাহরণ দিয়েছি।” (সূরা ইবরাহীম ৪২-৪৫)

আল্লাহ তায়ালা পবিত্র কুরআনে আরো বলেন, “শুধু তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা যায়, যারা মানুষের ওপর অত্যাচার করে।” (সূরা আশ শুয়ারা ৪২)
সূরা আশ শুরার শেষ আয়াতে তিনি বলেছেন,”যুলুমবাজরা তাদের যুলুমের পরিণতি সহসাই জানতে পারবে।” (সূরা আশ শুয়ারা ২২৭)
এ সম্পর্কে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন; “আল্লাহ যালেমকে সুদীর্ঘ সময় দিয়ে থাকেন। অবশেষে যখন পাকড়াও করেন তখন তাকে আর রেহাই দেন না।” (বুখারী, মুসলিম) এরপর তিনি এ আয়াত পাঠ করেন,”তোমার প্রভূর পাকড়াও এ রকম হয়ে থাকে, যখন তিনি যুলুমরত জনপদসমূহকে পাকড়াও করেন। তাঁর পাকড়াও অত্যন্ত যন্ত্রণাদায়ক, অপ্রতিরোধ্য।” (সূরা হুদ ১০২)
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন; “কেউ যদি তার কোন ভাইয়ের সম্মানহানি কিংবা কোন বস্তুর ক্ষতিসাধন করে থাকে, তাহলে আজ তার কাছ থেকে তা বৈধ করে নেয়া উচিত অর্থাৎ ক্ষমা চেয়ে নেয়া উচিত এবং সে ভয়াবহ দিন আসার আগে এটা করা উচিত, যেদিন অর্থ দিয়ে কোন প্রতিকার করা যাবে না, বরং তার কাছে কোন নেক আমল থাকলে তার যুলুমের পরিমাণ হিসেবে মযলুমকে উক্ত নেক আমল দিয়ে দেয়া হবে এবং তার কোন অসৎ কাজ না থাকলেও উক্ত মযলুমের অসৎ কাজ তার ওপর বর্তানো হবে।” (বুখারী ও তিরমিযি)
আর একটি হাদীসে কুদসীতে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, আল্লাহ বলেছেনঃ “হে আমার বান্দারা ! আমি নিজের ওপর যুলুম হারাম করে দিয়েছি এবং তোমাদের পরস্পরের মধ্যেও তা হারাম করেছি। সুতরাং তোমরা পরস্পরের ওপর যুলুম করা থেকে বিরত থাক।” (মুসলিম, তিরমিযি)
অন্য এক হাদীসে উল্লেখ রয়েছে; “রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সাহাবীদেরকে জিজ্ঞেস করলেন- ‘তোমরা কি জান, দরিদ্র কে? তাঁরা বললেন, আমাদের মধ্যে যার অর্থ সম্পদ নেই, সে দরিদ্র। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন; আমার উম্মতের মধ্যে দরিদ্র ব্যক্তি সে, যে কিয়ামতের দিন প্রচুর নামায, যাকাত, রোযা ও হজ্জ্ব সাথে করে আনবে, কিন্তু সে এমন অবস্থায় আসবে,
কাউকে গালি দিয়ে এসেছে, 
কারো সম্পদ হরণ করে এসেছে, 
কারো সম্মান হানি করেছে, 
কাউকে প্রহার করেছে,
কারো রক্তপাত করেছে। এরপর এ ব্যক্তির সৎ কর্মগুলো তাদের মধ্যে বন্টন করে দেয়া হবে। এভাবে মযলুমদের ক্ষতি পূরণের সাথে তার সৎ কাজগুলো শেষ হয়ে গেলে মযলুমদের গুনাহগুলো একে একে তার ঘাড়ে চাপিয়ে তাকে জাহান্নামে নিক্ষেপ করা হবে।” (বুখারী)
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন; “যে ব্যক্তি এক বিঘত পরিমাণও অন্যের জমি জবর দখল করবে, কিয়ামতের দিন তার ঘাড়ে সাতটি পৃথিবী চাপিয়ে দেয়া হবে।” ( বুখারী ও মুসলিম)
হাদীসে কুদসীতে আল্লাহ বলেছেনঃ “আমি সে ব্যক্তির উপর অত্যন্ত ক্রুদ্ধ হই, যে এমন ব্যক্তির উপর অত্যাচার করে, যার আমি ব্যতীত কোন সাহায্যকারী নেই।”
তাওরাতে বর্ণিত রয়েছে যে, ” কিয়ামতের দিন পুলসিরাতের পাশ থেকে একজন এ বলে ঘোষণা দিতে থাকবেঃ “ওরে বলদর্পী, নিষ্ঠুর যালেমগণ! আল্লাহ নিজের মর্যাদা ও প্রতাপের শপথ করে বলেছেন, আজকের দিন কোন অত্যাচারী এ পুল পার হয়ে জান্নাতে যেতে পারবে না।”
হযরত জাবের রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, “মক্কা বিজয়ের বছর যখন আবিসিনিয়ায় হিজরতকারী মুহাজিরগণ রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের কাছে প্রত্যাবর্তন করেছিল, তখন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেনঃ “তোমরা কি আমাকে আবিসিনিয়ায় থাকাকালীন কোন বিস্ময়কর অভিজ্ঞতার কথা জানাবে? তখন মুহাজিরদের মধ্য থেকে এক যুবক বলল; ‘জ্বী -হ্যাঁ, হে আল্লাহর রাসূল! একদিন আমরা সেখানে বসা থাকা অবস্থা দেখলাম, আমাদের পাশ দিয়ে এক বৃদ্ধা মাথায় এক কলসী পানি নিয়ে যাচ্ছে। সহসা এক যুবক এসে তার ঘাড়ে হাত দিয়ে জোরে ঠেলা দিলে তাতে বৃদ্ধা পড়ে গেল এবং তার পানির কলসীও পড়ে ভেঙ্গে গেল। বৃদ্ধা উঠে দাঁড়িয়ে সে যুবকটির দিকে তাকিয়ে বলল,“হে বিশ্বাসঘাতক ! আল্লাহ যেদিন আরশ স্থাপন করবেন, যেদিন আগের ও পরের সকল মানুষকে সমবেত করবেন, এবং যেদিন মানুষের হাত ও পা তাদের কৃতকর্ম সম্পর্কে সাক্ষ্য দিবে, সেদিন তুই দেখে নিস, আল্লাহর সামনে তোর কি পরিণতি হয় এবং আমার কি অবস্থা হয়।” একথা শুনে আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, “বৃদ্ধা ঠিক বলেছে। যে জাতি তার দুর্বলদের কল্যাণার্থে সবলদেরকে নিয়ন্ত্রণ করে না, সে জাতিকে আল্লাহ কিভাবে সম্মানিত করবেন?” 

মহাশূন্য বিজয় ও অতি পারমানবিক কণার উপস্থিতি

মহাশূন্য বিজয় ও অতি পারমানবিক কণার উপস্থিতি






মহাশূন্য বিজয়

‘হে জিন ও মানবকুল, নভোমণ্ডল ও ভূমণ্ডলের প্রান্ত অতিগম করা
যদি তোমাদের সাধ্যে কুলোয় তবে অতিগম কর। তবে (আল্লাহ
তাআলার পক্ষ থেকে) ক্ষমতা ব্যতিরেকে তোমরা তা অতিগম
করতে পারবে না। (রহমান, ৫৫ : ৩৩)
এই আয়াতের প্রকৃত অনুবাদ বুঝার জন্যে কিছু ব্যাখ্যার প্রয়োজন। বাংলা
ভাষায় ‘যদি’ (ইংরেজিতে if ) শব্দটি এমন একটি শর্ত নির্দেশ করে যা,
হয়তো সম্ভব কিংবা অসম্ভব —। আরবি ভাষায় ‘যদি’ বুঝানোর জন্যে
একাধিক শব্দ ব্যবহৃত হয়। যখন ‘লাও’ শব্দ ব্যবহৃত হয়, তা এমন
একটি শর্ত নির্দেশ করে যা অসম্ভব। আর যখন ‘ইন’ শব্দ ব্যবহৃত
হয়, তা এমন একটি শর্ত নির্দেশ করে, যা সম্ভব। উপরিউক্ত আয়াতে
কুরআন মাজিদ ‘ইন’ শব্দ ব্যবহার করেছে। ‘লাও’ শব্দ ব্যবহার
করে নি। অতএব কুরআন মাজিদ ইঙ্গিত করছে, এক্ষেত্রে সম্ভাব্যতা
বিদ্যমান রয়েছে যে, মানুষ একদিন নভোমণ্ডল ও ভূমণ্ডলের স্তরসমূহ ভেদ
করতে পারবে। আরও লক্ষণীয় যে, নিম্ন লিখিত আয়াতেও মহাশূন্য ভেদ
করার কথা উল্লেখ করে। কিন্তু তাতে ‘লাও’ ব্যবহৃত হয়েছে

‘আর যদি আমি ওদের সামনে আকাশের কোনো দরজাও খুলে দিই, আর
তারা তাতে দিনভর আরোহনও করতে থাকে, তবুও তারা একথাই বলবে,
আমাদের দৃষ্টির বিভ্রাট ঘটানো হয়েছে, না- বরং আমরা যাদুগ্রস্ত হয়ে
পড়েছি।’ (হিজর, ১৫ : ১৪-১৫)
এই আয়াতটিতে মক্কার কাফিরদের কথা উল্লেখ করা হয়েছে এবং বলা
হয়েছে, এমনকি যদি তারা নভোমণ্ডল ভেদ করতেও সক্ষম হয়, তারা
মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর বাণীকে বিশ্বাস করবে না।
এই আয়াতে যে শব্দ ব্যবহার করা হয়েছে তা হচ্ছে ‘লাও’ যা এমন
সম্ভাবনার কথা বলে, যা বাস্তবায়িত হওয়ার নয়। ইতিহাস দেখিয়েছে,
মক্কার কাফিররা মুহাম্মদ সাল্লাল্ললাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর
অসংখ্য মুজিজা প্রত্যক্ষ করেছে। তথাপি তারা তিনি যে বার্তা নিয়ে এসেছিলেন
তাতে বিশ্বাস স্থাপন করে নি।
ইতোপূর্বে উদ্ধৃত আয়াত সম্পর্কে আরো একটি বিষয় লক্ষ্য করার আছে।
তাতে আরবি শব্দ ‘তানফুযু’ ব্যবহৃত হয়েছে, যার ক্রিয়ামূল হল
‘নাফাজা’ যার পরে আরবি শব্দ ‘মিন’ এসেছে। আরবি অভিধান
অনুসারে এই বাকরীতির অর্থ হল, ‘সোজা অতিক্রম করা এবং একটি বস্তুর
একদিকে প্রবেশ করে অন্যদিক দিয়ে বেরিয়ে আসা। অতএব এটি নির্দেশ
করে একটি গভীর অনুগমন এবং একটি বস্তুর অপরপ্রান্ত দিয়ে নির্গমন।
এটি হুবহু তা-ই, যে অভিজ্ঞতা বর্তমানে মহাশূন্য বিজয়ের ক্ষেত্রে মানুষ
লাভ করেছে। পৃথিবীর মধ্যাকর্ষণ শক্তি একটি বস্তু ছেড়ে দেয় এবং তা
মহাশূন্যে তার বাহিরে নির্গমন করে। এভাবে কুরআন মাজিদ মহাশূন্য
বিজয়ের বিস্ময়কর ঘটনা বর্ণনার ক্ষেত্রে সর্বাধিক উপযুক্ত শব্দ ব্যবহার
করেছে। অধিকন্তু এমন একটি গুরুত্বপূর্ণ বৈজ্ঞানিকতথ্য, সর্বাধিক উপযুক্ত
শব্দে, চৌদ্দশ বছরেরও পূর্বের এমন একজন নিরক্ষর মানুষের নিছক কল্পনা
বলে আরোপিত হতে পারে না, যিনি তার পুরো জীবন কাটিয়েছেন একটি
মরুময় এলাকায়।
অতি পারমানবিক কণিকার উপস্থিতি

আর কাফিররা বলে, ‘কিয়ামত আমাদের কাছে আসবে না’।
বলুন, ‘অবশ্যই আমার রবের কসম! যিনি অদৃশ্য সম্পকের্ অবগত,
তা তোমাদের কাছে আসবেই। আসমানসমূহে ও জমীনে অন ু
পরিমাণ কিংবা তার চেয়ে ছোট অথবা বড় কিছুই তার অগোচরে
নেই। বরং সব কিছু সুস্পষ্ট কিতাবে (লিপিবদ্ধ) রয়েছে। (সাবা,
৩৪ : ০৩)
এই আয়াতে যে আরবি শব্দটি ব্যবহৃত হয়েছে তা হল, ‘যাররাহ’ ।
আব্দুল্লাহ ইউসুফ আলী ও মারমাডিউক পিকথাল ইংরেজিতে ‘যাররাহ’
শব্দের অনুবাদ করেছেন ATOM (পরমাণু) শব্দ দ্বারা। যখন এই আয়াত
অবতীর্ণ হয় তখন ‘যাররাহ’ (পরমাণু) ছিল মানুষের জানা মতে সবচেয়ে
ক্ষুদ্র কণিকা। এই আয়াতে কুরআন মাজিদ ‘যাররাহ’র চেয়েও ক্ষুদ্রতর
কণিকার উপস্থিতির কথা বর্ণনা করে।
পদার্থ বিজ্ঞানের সাম্প্রতিক গবেষণা দেখিয়েছে, পরমাণুকে আরও ক্ষুদ্রতর
এককে বিভাজিত করা যেতে পারে। কুরআন মাজিদ এই বিষয়টির স্বীকৃতি
দিয়েছে পদার্থ বিজ্ঞানীরা তা আবিষ্কার করার চৌদ্দশ’ বছরেরও অধিককাল
পূর্বে।