সোমবার, ২৮ সেপ্টেম্বর, ২০১৫

ঈদ মোবারক

ঈদ মোবারক
বাংলাদেশের প্রতিটি মানুষের আল্লাহ্‌র  প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করে ।
মানুষ  আল্লাহ্‌র  কাছে গ্রহণযোগ্য হিসেবে  কুরবানী করে ।

রবিবার, ১৩ সেপ্টেম্বর, ২০১৫

কাল্পনিক কথোপকথন

কাল্পনিক কথোপকথন


গলা ব্যাথার কারণে ইদানিং শুধু জাউ খেতে হয়। জাউ দুই একবেলার জন্যে খুব ভালো খাদ্য। কিন্তু প্রায় প্রতিবেলার জন্যে অখাদ্যের কাছাকাছি। গতকাল রাতে এই অখাদ্য একগাদা খেয়ে ফেলেছি। খাওয়া দাওয়ার পর শুয়ে শুয়ে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের "ছন্দ" বইয়ের পাতা উল্টাচ্ছি। কঠিন বই। 

"এক সময়ে জ্যোতিদাদারা দূরদেশে ভ্রমণ করিতে গিয়াছিলেন, তেতালার ছাদের ঘরগুলি শূন্য ছিল। সেই সময় আমি সেই ছাদ ও ঘর অধিকার করিয়া নির্জন দিনগুলি যাপন করিতাম। এইরূপে যখন আপনমনে একা ছিলাম তখন, জানিনা কেমন করিয়া... " এই পর্যন্ত পড়ার পর আমার পেটের ভেতর ভুটভাট শব্দ শুরু হলো। বদহজমের প্রাথমিক লক্ষন। মেজাজটা গেল বিগড়ে। 

মেজাজ ভালো করার জন্যে কিছু একটা করা দরকার। ভাবলাম কবিগুরুর সাথে কাল্পনিক কথোপকথন করা যেতে পারে। আমি বারান্দায় গিয়ে চেয়ারে বসলাম। দৃশ্যপট এরকম...

কবিগুরু বারান্দায় বসে একমনে আকাশ দেখছেন। পাশে আমি বসে আছি। তার মতো আমিও আকাশ দেখার চেষ্টা করছি। আমি তেমন ভালো দেখতে পাচ্ছি না। কারণ আমার সামনে দড়িতে স্যান্ডোপ্যান্ট শুকাতে দেয়া হয়েছে।

-কবিগুরু, আপনি এখানে আসলেন কিভাবে? 

-স্বর্গে হাঁটছিলাম। হঠাৎ দেখি তোমার ঘরে এসে পড়েছি। কাহিনী কি কিছুই বুঝলাম না! 

-যাকগে! ভালোই হলো। ভালো আছেন?

-হু। তোমার সাথে আমার ব্যক্তিগত কিছু কথা আছে।

-কি কথা!

-তোমার ঘরের দেয়ালে টানানো পোস্টারটা কার? 

-কাজী নজরুল ইসলামের! আপনি চেনেন না নাকি? কি সর্বনাশ?

-গর্ধবের মতো কথা বলছো। চিনবোনা ক্যানো? পোস্টারের উপর ধুলাবালির আস্তর পড়ে আছে। চেহারা চেনার উপায় আছে? 

-সরি।

-আমার পোস্টার নেই ক্যানো?

-আপনার জোয়ান বয়সের পোস্টার পাইনি। বুড়ো বয়সের একটা পেয়েছিলাম। আলখাল্লা পরে আছেন। ইয়া লম্বা দাঁড়ি গোফ। দেখলেই বুকে ধাক্কার মতো লাগে।

-তুমি তো ফাজিলের চূড়ান্ত। যাই হোক... একটা বিষয় নিয়ে ভাবছি। বিরক্ত করো না। 

-মৃত্যুর পরেও সাহিত্য নিয়ে আছেন?

-হুম। একটা গান রচনা করবো। র‍্যাপ গান।

-কি সর্বনাশ!

-তুমি কি আমাকে সাহায্য করতে পারবে বাছা?

-অবশ্যই। যেমন আপনি লিখবেন, সেদিন দুজনে দুলেছিনু বনে, ফুলডোরে বাঁধা ঝুলনা। তখন আমি চিৎকার করে বলবো... 

হেই বেবি! তুমি ক্যানো আছো ঝুলে, 
জামা কাপড় যাবে খুলে! 
তাই সাবধানে ঝুলো, 
আমাকেও গাছে তুলো!

-তুমি অতিরিক্ত বদমাশ। কি ন্যাস্টি কথাবার্তা!

-সরি।

-তবে তুমি ছেলেটা ভালো। তোমার দুই একটা লেখা পড়েছি। ফাউল লেখা। তোমাকে লেখা শিখাবো।

-বেতন কতো দিতে হবে?

-মাসে এক লাখ দিলেই হবে।

-মারিয়া ফেলো! আমারে মারিয়া ফেলো!

-আমার পড়া না শিখলে অবশ্যই মারবো! 

-কবিগুরু, আপনে যান। আমি ঘুমাবো। 

-আচ্ছা। আগামী মাসের এক তারিখ থেকে আসবো। বাই। সি ইউ। 

-বাই।

আমি বারান্দা থেকে চলে আসলাম। পোস্টারের উপর আসলেই ধুলাবালির স্তর। কালো একটা কি যেন নজরুল ইসলামের গালে লেগে আছে। মোটা তিলের মত। মোটা তিলের কারণে তাকে গ্রামের ঘটক সাহেবের মতো দেখাচ্ছে। পোস্টার মুছে বিছানায় আসলাম। চোখে ঘুম নেই। বই পড়েই কাটিয়ে দিতে হবে। ভূতের গল্পের বই। আগামীতে ভূতের সাথে কথোপকথনের ইচ্ছা আছে।

আমি স্বার্থপর, আমি অমলিন

আমি স্বার্থপর, আমি অমলিন

পৃথিবীর সবাই স্বার্থপর। কথাটা মা'কে একটু ঘুরিয়ে ফিরিয়ে বলতেই তিনি আমার দিকে সন্দেহের দৃষ্টিতে তাকালেন এবং ব্যাপারটা ঝারি মেরে উড়িয়ে দিলেন। অথচ ব্যাপারটা সত্যি। আজ থেকে ঠিক তিনদিন আগে একটি দিন ছিলো এবং সেই দিনটির শেষের দিকে আমার এক মামা একটি হাঁস নিয়ে আমাদের বাসায় হাসিমুখে উপস্থিত হলেন। রাত বেশি হয়ে যাওয়ায় হাঁসটির প্রাণদণ্ড স্থগিত করা হলো। পরের দিন সকালে তাকে জবাই করা হবে এরকম ধারণা নিয়ে আমি ঘুমুতে গেলাম। হাঁসটি ঘুমুলো না। সে সারারাত কোন এক বিদগ্ধ প্রেমিকার মত জেগে থাকলো এবং ধরে নেই তার প্রেমিককে ডাকা ডাকি করলো। 

পরদিন দুপুরে ঘুম ভাঙতেই শুনলাম হাঁসটি আমাদের একটি ডিম উপহার দিয়েছে। ডিমটি বড়ো এবং সুন্দর। বড়ো এবং সুন্দর এই ডিমটি উপহার দেয়ার কারণে সেদিন তাকে জবাই করা হলো না। তাকে খেতে দেয়া হলো। সে গম্ভীর ভাবে সারা বারান্দায় পায়চারি করে। ভাত খায়।

রাতে ঘুমুতে যাওয়ার সময় আমি তার ডাক শুনি। ছোট ভাই এবং আমার কাজিন ভবিষ্যৎ ডিমটির সাইজ নিয়ে আলোচনা করে। আমার চোখ ছলছল করে। যেদিন সকালে ডিম দেবেনা সম্ভবত সেদিনই তাকে জবাই করা হবে। প্রতিদিন একটি ডিম পাড়ার উপর তার জীবন নির্ভর করছে। মানুষ কতটা নিষ্ঠুর এবং স্বার্থপর হতে পারে আমি সেই চিন্তা করতে করতে ঘুমানোর চেষ্টা করি।

রাতে ঠিকমত ঘুমুতে পারিনা। ভয়াবহ দুঃস্বপ্ন দেখি। এইতো আজ দেখলাম এক মেয়ে আত্মহত্যা করেছে। মেয়েটি যেই ঘরে আত্মহত্যা করেছে সেই ঘরটিতে আমাকে থাকতে দেয়া হয়েছে। ক্যানো দেয়া হয়েছে আমি জানি না। সেই ঘরে মেয়েটির আত্মা ঘুরঘুর করে। আত্মা সাদা রঙের শাড়ি পরা। সে বিচিত্র ভঙ্গিমায় আমাকে ভয় দেখায়। আমি ভয় পাই। চিৎকার দিয়ে বিছানায় উঠে বসি। আমার চিৎকার শুনে বারান্দায় থাকা হাঁস ব্যাকুল স্বরে ডাকাডাকি করে। আমার ভয় বেড়ে যায়। গলা শুকিয়ে আসে। পানি খেতে গেলে মাঝে একটা ঘর পার হয়ে যেতে হবে। পানি খেতে পারি না। কাঁদতে ইচ্ছে হয়।

স্বার্থপর মানুষের ভীরে বাঁচতে ইচ্ছে হয় না। মরতেও ইচ্ছে হয় না। মৃত্যু ভয় পাই। শুধুমাত্র বেঁচে থাকার জন্যে স্বার্থপর মানুষের ভীরে বেঁচে আছি। যেহেতু কোন একটা কারণে বেঁচে আছি তাই আমিও স্বার্থপর। ক্যামন যেন লাগে। ইচ্ছে হয় কেউ একজন হাত ধরে বলুক... 'আমাকে ভালোবাসবে? তাহলে আমিও তোমাকে ভালোবাসবো। আমিও স্বার্থপর।' দুজন স্বার্থপর মানুষ মিলে বেঁচে থাকবো। দুঃস্বপ্ন দেখে চিৎকার করে উঠলে সেই মানুষটা এক গ্লাস পানি এনে দেবে। সেই পানিটা এক ঢোকে খেয়ে ফেলে বাকী রাত জেগে কাটিয়ে দেবো। এমন হলে স্বার্থপর পৃথিবীটাকে এতোটা মন্দ লাগবে না। মনে হবে, স্বার্থপর পৃথিবীটা এতো সুন্দর! এতোটা সুন্দর হয় কি করে!

গুরুত্বপূর্ণ কিছু বৈজ্ঞানিক নাম

গুরুত্বপূর্ণ কিছু বৈজ্ঞানিক নাম

 মানুষ = Homo sapiens
 আম = Mangifera indica
 কাঁঠাল = Artocarpus heterophyllus
 পাট = Chorcorus capsularis
 আলু = Solanum tuberosum
 পিঁয়াজ = Allium cepa
 গরু = Boss indica
 ছাগল = Capra hircus
 সিংহ = Panthera leo
 রয়েল বেঙল টাইগার = Panthera tigris
 টাইগার = Tigriana tigris
 কলেরা জিবানু = Vibrio cholerae
 মেলেরিয়া জিবানু = Plasmodium vivax
 জবা = Hibiscus rosa-sinensis
 ভুট্টা = Zea mays

স্বার্থপর

স্বার্থপর

আমি আমার মা-বাবার একমাত্র সন্তান। আমার বাবা সরকারের একজন ডাকসাইটে আমলা। অর্থবিত্ত, ব্যক্তিস্বাধীনতার কখনো কোনো অভাব ছিলো না আমার জীবনে। আমার বাবার একটিমাত্র ভাই ছিলেন। তিনি বহু বছর আগে মারা গেছেন নিঃসন্তান অবস্থায়। সেই সূত্রে আমার বাবা তার পৈতৃক সম্পত্তিরও একচ্ছত্র অধিপতি।
আর সেসব সম্পত্তি তিনি আগলেও রেখেছেন দোর্দণ্ড প্রতাপে। গ্রামের বিশাল বাড়িটিতে এতোদিন পাহারায় নিয়োজিত থেকেছেন আমার চাচার বিধবা স্ত্রী। সেখানে আরো আছে একদঙ্গল চাকর-দাসী, গরু-ছাগল, হাঁস-মুরগী, কুকুর-বেড়াল। এদের সবার মধ্যে চাচীআম্মাই ছিলেন সর্বেসর্বা। কিন্তু কস্মিন কালে দামি গাড়িটি হাঁকিয়ে আমরা যখন গ্রামে যাই, আমার বাবা-মায়ের দাপটে বাড়ির মানুষগুলোও কুকুর-বেড়ালে পরিণত হয়ে যায়। বাবা অবশ্য হিসাব-নিকাশের অজুহাতে প্রায় প্রায়ই গ্রামে যান। আমার মায়ের তাতে ভীষণ আপত্তি। এ নিয়ে দুজনের মধ্যে কাঁদা ছোঁড়াছুঁড়ি কম হয় না! কিন্তু আমার কান বাঁচানোর চেষ্টায় দুজনেই যে তটস্থ তা বুঝতে পারি।
যা-ই হোক, আর সবাই কুকুর-বেড়াল হয় হোক, চাচীআম্মার বেড়াল হয়ে যাওয়াটা মনে মনে আমি বরদাশত করতে পারতাম না। কেননা নিজ্ঝুম ওই পুরীটি তিনিই তো সরব রেখেছেন। গ্রামে আমার বাবার শত্রু ছাড়া একজনও মিত্র নেই। সেসব শত্রুর মুখে ছাই দিয়ে টিমটিমে প্রদীপের মতো চাচীআম্মা যেনো নিজেই জ্বলেছেন আপ্রাণ চেষ্টায়।

চাচীআম্মাকে কোনোদিনও দেখিনি ঢাকায় আমাদের এ বাড়িতে আসতে। বাড়ির খবরাখবরের ব্যাপারেও লোকজন এসে আমার বাবার অফিসে যোগাযোগ করে। কতোদিন দেখেছি বাবা ফোন করে আমার মায়ের কাছে তাৎক্ষণিক পরামর্শ চাইছেন। কথাবার্তার ধরনে বোঝা যায় গ্রাম থেকে কোনো ব্যাপারে কেউ এসে সরাসরি আমার বাবার অফিসে উঠেছে। মা অবশ্য ঝামেলার কথা শুনতেও চান না। কিন্তু স্বামীর লাগাম টেনে রাখেন শক্ত হাতে।বড় রাস্তা থেকে বাড়ি পর্যন্ত বাঁধানো রাস্তা। আমাদের গাড়ি বৃক্ষরাজিতে ঘেরা উঠোনের বিরাট ঘরটির দরজার কাছে গিয়ে থামে। গাড়ির পেছনে পেছনে জোয়ারের মতো ছুটে আসে নানান বয়সী মানুষের ঢল। , ছেলে, বুড়ো, কিশোরযুবক পুরুষ-মহিলা কে না থাকছে তার মধ্যে! বিকেল থেকে অধিক রাত পর্যন্ত আসে বড় বড় মেয়ে, বউ-ঝি, বৃদ্ধরাও। বোঝাই যায়, অশেষ কৌতুহল আর আমাদের গনগনে চুলায় চা নাশতার আয়োজনে সামিল হতেই সারাক্ষণ এদের এমন সরব আগমন। আন্তরিকতার লেশমাত্রও নয়। 
এক কাতারে দাঁড়িয়ে এরাই আমার বাবার পিণ্ডি চটকায় জোরেশোরেই। আবার একজনের অগোচরে আরেকজন এসে আমাদেরই চাকর-বাকরের কাছে ফিসফিসিয়ে তার উদ্ধৃতি তুলে দিয়ে যায়। ভাগিস্য সামনে এসে বলার মতো সাহস তাদের কারো নেই। এসবের আঁচ অবশ্য আমার গায়ে ওঠার প্রশ্নই আসে না। আমার বাবা-মায়ের সতর্ক পাহারা এড়িয়ে আমি কোনোদিন ওই মানুষগুলার কাছাকাছি হতে পারিনি। আমি বুঝতে পারি ওদের কাছে আমি ধরাছোঁয়ার বাইরের কেউ। আমাকে দেখতে যেনো ওদের চোখে পলক পড়ে না। আর এমন সব সময় আমার কেমন ফুলপরী ফুলপরী মনে হয় নিজেকে।


আমার মায়ের মেজাজ আমার বাবার থেকে কম নয়। কপাল কুঁচকে রাখতে রাখতে, ভাঁজগুলো স্থায়ী হয়ে গেছে। বাঘের মতো স্বামীকে কথার বাণে তিনি ঝাঁঝরা করেনমুড়িভাজা ঝাঁঝরের মতো। বাবা মাঝে মাঝে চটলেও তাকে আমার মায়ের সামনে ভুলেও মাথা তুলতে দেখিনি। আমার বাবার উত্তরণের উন্মেষটা আমার মায়ের বাবাই যে ঘটিয়েছিলেন! মাথা না তোলার কারণটি বোধহয় এই। প্রচ- দাপুটে ঘরের মেয়ে আমার এই মা, এই উন্নাসিকতায় গিলে খেয়েছে তার সবটুকু কমনীয়তা। কিন্তু গলদটা স্বয়ং বিধাতাই আমূল লেপে দিয়েছেন তার জীবনে।
বিত্তবান পিতার মেধাহীন সন্তান আমার মা। লেখাপড়ায় খুব বেশি দূর এগোতে পারেননি। শুধু ভালো খেতে-পরতে ভালোবাসেন। নির্ঝঞ্ঝাট, বিলাসী জীবন-যাপনে অভ্যস্ত তিনি। আর সেই আয়েশী বর্ণনা শোনানোর জন্য তার আছে বিরাট পরিম-লও। বন্ধুর বেশে আসলে তারা এক একজন ঘোর প্রতিদ্বন্ধী! এছাড়া আলাদা করে শনাক্ত করা মতো আর কোনো পরিচিতি তিনি অর্জন করতে পারেননি। যার দরুণ বাড়তি জ্ঞান-গরিমা অর্জনের ধকল আমাকেও পোহাতে হয় না। মা আমাকে পুতুলের মতো সাজাতে ভালোবাসেন বলেই আমি সেজে-গুজে থাকি
স্কুল-কলেজে, এখনকার প্রতিবেশীদের যতো ছেলেমেয়ের সঙ্গেই ভাব করি না কেন, আমার মা তা নিয়ে কখনো খবরদারি করেন না। কিন্তু আত্মীয় স্বজনের সঙ্গে আমার মেশাটাই মা সহ্য করতে পারেন না। সেরকম হলে দুপক্ষকেই বিপর্যস্ত করে ছেড়ে দেন। এই বাধাটা টের পেয়েই ইদানিং আত্মীয়-স্বজন, গ্রাম এবং চাচীআম্মার প্রতি টানটি আমার অপতিরোধ্য হয়ে উঠেছিলো। চাচীআম্মার ¤্রয়িমাণ মুখখানা মেঘ গলানো চাঁদের মতো ফুটি ফুটি করেও স্পষ্ট হয়নি আমার চোখে। কারণ তাকে কখনো ছুঁয়ে দেখা হয়নি আমার। মাকে রাগানোও আমার ধাতে সয় না। এছাড়া সব সময়ই যে মাকে আমার ভালো লাগে তা নয়।
মা এমনিতেই আমাকে কাছে কাছে রাখেন। কিন্তু গ্রামের বাড়িতে গেলে রাতে শিশুর মতো বুকে আগলে রাখেন। বাবা এবং আমার দিকে সমান নজর রাখতে তার তখন দাঁড়িপাল্লার মতো অবস্থা। আর নিজ্ঝুম পুরী আলোকিত করা প্রতিমার মতো চাচীআম্মা হয়ে ওঠেন প্রাণহীন, ফ্যাকাসে, তীরবেঁধা পাখির মতো। যন্ত্রের মতো তিনি তবু আরো তাড়িত হচ্ছেন। চালিত হচ্ছেন কাজের লোকদের সঙ্গে এক কাতারে মিশে গিয়ে।

কতোবারই আমার মনে হয়েছে চাচীআম্মা আমাকে ডাকছেন। তার বোবা আর্তনাদ নিঃশব্দে চৌচির করে দিতো আমার পাঁজর। আকাশে-বাতাসে আমি তার আর্তনাদের প্রতিধ্বনি শুনতে পেতাম। কিন্তু শিশুকাল থেকেই যে আমার হাত ধরে বসে আছেন আমার মা। তিনি আমাকে পঙ্খিরাজে উড়ে চলা রাজকুমারের স্বপ্নে বিভোর করেন। প্রয়োজনে দৈত্যের ভয়ও দেখান। হাঁটা চলার ত্রুটিগুলো খুঁটে খুঁটে মুক্ত হতে শেখান।
যার দরুন আমার অন্তদৃষ্টি কোনোদিন চোখের পাতা ভেদ করতে পারেনি। অজানা আশঙ্কায় ছিন্নভিন্ন আমার মা তার কৌশলি তৎপরতায় আমার সবটুকু মনোযোগ তাই কেবল তার দিকেই নিবিষ্ট করে রাখতে পেরেছেন। সন্তানদরদী উদারচেতা বাবাও আমার চাওয়া-পাওয়াতে কোনোদিনও তারতম্য ঘটতে দেননি। তাই দ্বিধা-দ্বন্দ্ব, সন্দেহের মতো কোনো বৈরি বোধই এক ঝাপটা বাতাসের মতো অবকাশ কখনো পায়নি। আমার চেতনার শিখাটিকে গনগনে করে তুলতে।

জীবনে এই প্রথম আমি বাড়িতে মাকে ছাড়া একা। চাচীআম্মার অসুখের খবর শুনে বাবা-মা দু’জনই তাকে দেখতে গেছেন। আমাকে কেনো নেননি তারা? অনার্স ফাইনাল দিলাম। আমার হাতে এখন প্রচুর সময়। এ বয়সে কী এমন অসুখ চাচীআম্মার হতে পারে? চাচীআম্মার বয়য় চল্লিশের কাছাকাছি, যা আমার মায়ের সমান। কী নিটোল স্বাস্থ্য আমার মায়ের। দুধে আলতা গায়ের রং। কিন্তু চাচীআম্মা সারাক্ষণ খাটতে খাটতে শরীরটাকে কালসিটে, শীর্ণকায় করে ফেলেছেন। নিজের দিকে কোনো খেয়াল তার নেই।

চাচা যেহেতু স্ত্রীকে কিছু লিখে দিয়ে যাননি সেহেতু তিনি স্বামীর সম্পত্তির কিঞ্চিৎ যা পেতেন তা আর কতোটুকু? আর আমার বাবার হাত গলিয়ে সেটা বের করে নেয়া সহজ ছিলো না। তা তারই সন্তান হিসেবে আমি হলফ করে বলতে পারি। শুনেছি চাচীআম্মার বনেদী বাবার বাড়ির লোকদের জমিজমা থাকলেও তারা হীনবল। বহু বছর যাবৎ তার বাবা নেই। ভাইয়েরাও যে যার মতো। আর পায়ে অগ্নি-ঘুঙুর বাঁধা থাকলেও এই সোনার খাঁচাটির ওপর চাচীআম্মার টানটি ছিলো অপরিসীম। তাই বুঝি একদ-ও ছেড়ে কোথাও গিয়ে থাকেননি।

চাচীআম্মাকে আমি কোনোদিন হাসতে দেখেনি। তবে আমার চোখে চোখ পড়লে তিনি হাসি দিয়ে মনোযোগ আকর্ষণ করতে চাইতেন। আমি দৃষ্টি না সরানো পর্যন্ত তিনি তা স্থির করে রাখতেন এটুকু অবশ্য ঘটতো নাগালের বাইরে দূর থেকে। আমার মায়ের স্বপ্নেরও অগোচরে। চাচীআম্মার ব্যর্থ, করুণ চেষ্টাটুকু মনে পড়ে আমার টলায়মান সত্তাটি আরো বিদীর্ণ হয়ে যাচ্ছে। জানালা খুলে আমি পথের দিকে তাকিয়ে আছি। কার অপেক্ষায় আছি আমি? আমার অভিধানে অপেক্ষা বলে তো কোনো শব্দ নেই! তাহলে?

রিকশা থেকে কে যেনো বাড়ির গেটে নামলো। ঝাপসা মুখখানি চেনা চেনা মনে হতেই দৌড়ে গেলাম। ততোক্ষণে দারোয়ান গেট খুলে দিয়েছে। হোঁচট খেতে খেতে মতি চাচা আমার দিকে এগিয়ে এলো। আমাকে দেখেই সে ময়লা, জীর্ণ পাঞ্জাবির পকেটে হাত ঢুকিয়ে হাউমাউ করে কাঁদতে কাঁদতে বের করে আনলো দুগাছি সোনার চুড়ি, এক ছড়া চেইন, দুটো মাকড়ি। যা আমার স্বল্প শিক্ষিত, আটপৌরে চাচীআম্মা পরে থাকতেন।

মতি চাচা আমাদের বাড়ির ভৃত্য। আমার বাবা-চাচারই বয়সী। আমার দাদা জীবিত থাকতে সে শিশু বয়সে এসে আমাদের সংসারে ঢুকেছিলো। পরে আমার বাবা এবং চাচা মিলে আমাদের বাড়ির পাশের একখ- জমি তাকে লিখে দিয়েছেন। মতি চাচা সপরিবারে সেখানেই থাকে। মতি চাচার বড় ছেলেটিকে বাবা কোথায় যেনো পিয়নের চাকরিতে ঢুকিয়েছেন।

মতি চাচা গহনাগুলো আমার দুই হাতে যেভাবে গুঁজে দিলো, তাতেই দুলে উঠলো আমার পৃথিবী। তখনই কেনো যেনো আমি বুঝতে পারলাম ওই চাচীআম্মাই আমার মা! আর আমার এই মা পরের ধনে গোলা ভরার মতো অন্যের সন্তানে ভরেছেন নিজের শূন্য বুক।

জমাট হৃদয়ের অর্গল ভাঙার আগেই মতি চাচা বলে গেলো ‘আমার আর এখানে থাকা ঠিক হবি না মা! তোমার বাবা জানলি রক্ষে থাকপে না। তোমার বাবা তার মরা ভাইয়ের বিধবা বউকে বিয়ে করে বন্দি করে রেইখেছিলেন শুধু একটি সন্তান আর তার গেরস্থালি আগলে রাখপার জন্যি...।

মুহূর্তে কৃত্রিম জলজে ঘেরা অ্যাকুরিয়ামের রঙিন মাছের মতো মনে হলো নিজেকে। নিয়তি যাকে তার অবিচ্ছিন্ন গতি থেকে তুলে এনেছে কাচের ক্ষুদ্র বলয়ে। যেখান থেকে তার হাহাকার, দীর্ঘশ্বাস কোনোদিনই পৌছবে না সমুদ্রের মহাপ্রাণে। যার পাখনার খর্ব শক্তি ওই স্বচ্ছ আবরনণটুকুতে আপ্রাণচেষ্টায়ও ধরাতে পারবে না এতোটুকু চিড়, সামান্য ক’টি বুদবুদ তৈরি ছাড়া। আমি আমার মায়ের গহনাগুলো বুকে চেপে ধরি।

আমি আমার মায়ের ঘ্রাণ নিতে লম্বা করে দম নিই তাতে। শ্রাবণের আকাশ আমার মায়ের মুখের বিষণœতার মতো মেঘগুলো লুকোতে ব্যস্ত হয়ে উঠেছে যেনো আর লক্ষ্যহীন ভেসে যাওয়া সেই মেঘে চোখ ভাসিয়ে বৃষ্টি ঝরাই আমি। ম্লান সূর্যের মতো আমার মায়ের মুখের এক ঝলক আলোর প্রপাত শুধু খুঁজে নিতে।

নিঃশব্দে সেই অধরা’র উদ্দেশ্যে বলি, আমাকে কাছে টেনে নিতে না পারার ব্যর্থতায় নিজে ভুগে কষ্ট পেয়েছো। অধিকার ঘোষণার সাহস তোমার ছিলো না। নিশ্চয়ই বহুমাত্রিক সংশয়ে বিদীর্ণ হয়েছো তুমি। ব্যর্থতার ভার দুঃসহ হয়ে ওঠায়-ই বুঝি অসময়ে ধরাছোঁয়ার বাইরে পালালে, আমার সুখটুকু হরণ করে। স্বার্থপর!

মানুষ জীবন

মানুষ জীবন



হতাশ মানুষের গলায় একটা বাক্য প্রায়ই শোনা যায় ‘এটা কোন মানুষের জীবন হলো? কুকুরের জীবন কাটাচ্ছি!’ কিংবা  ‘এর চেয়ে গরুর জীবন ভালো!’ ইত্যাদি। এ ধরনের  উক্তির পেছনে কিন্তু একটা পৌরাণিক গল্প আছে। গল্পটা বরং শোনা যাক। 

সৃষ্টির শুরুতে ঈশ্বর সকল জীবিত প্রাণীকে চল্লিশ বছর আয়ু নির্ধারণ করে দেন। তখন মানুষ বেঁকে বসে। তারা অভিযোগ জানায়- না প্রভু, এটা কীভাবে হয়? চল্লিশ বছর বাঁচলে জীবনটাই তো ঠিকমত শুরু করতে পারব না। তার আগেই জীবন শেষ!

মানুষের কান্নাকাটি শুনে তখন গরুর খুব দয়া হলো। গরু ঈশ্বরকে অনুরোধ করে বলল, প্রভু, আমার আয়ু চল্লিশ বছর। আমার আয়ু থেকে মানুষকে পনেরো বছর দিয়ে দিন।

ঈশ্বর তাই করলেন। মানুষের আয়ু হলো পঞ্চান্ন বছর। কিন্তু মানুষ তখনও নাখোশ।

মানুষ আবার ঈশ্বরের দরবারে হাজির হয়ে বলল, হে ঈশ্বর, পঞ্চান্ন বছর বাঁচলে বাচ্চাকাচ্চা মানুষ করব কখন? আর সন্তান অমানুষ হলে বংশের মুখ রাখবে কে? আমাদের আরো সময় প্রয়োজন।

মানুষের কান্নাকাটি শুনে কুকুর এবার বলল, প্রভু ওরা যখন এত করে বলছে তখন আমার  চল্লিশ বছর আয়ু থেকে ওদের পনেরো বছর দিয়ে দিন।

ঈশ্বর তাই করলেন। মানুষের এবার আয়ু হলো সত্তর বছর। কিন্তু মানুষ তখনও নাখোশ। সে পুনরায় ঈশ্বরের শরণাপন্ন হলো। এবার ঈশ্বর খুব বিরক্ত হয়ে বললেন, তোমাকে তৈরি করাই আমার ভুল হয়েছে মনে হচ্ছে।

শুনে মানুষ বলল, প্রভু, একটা জিনিস ভুলে যাচ্ছেন। আপনার দয়ায় আমার আয়ু সত্তর বছর হয়েছে সে জন্য আমি কৃতজ্ঞ।

ঈশ্বর মেজাজ হারিয়ে বললেন, আমার দয়ায় নয়, বল গরু আর কুকুরের দয়ায়।
- ঠিক আছে তাদের কাছেও আমি কৃতজ্ঞ। তারা তো আপনারই সৃষ্টি। কিন্তু আমি যেটা বলতে চাচ্ছিলাম সেটা হচ্ছে, সত্তর বছরের পর আমাদের আর কিছু আয়ু দরকার।
- কেন?
- কারণ জীবন তখন শেষ কিন্তু আপনার গুণগান গাইবার জন্য তো কিছু সময় দরকার নাকি?
ঈশ্বর এবার বিপাকে পড়লেন! তখন প্যাঁচা বলল, প্রভু আমার চল্লিশ বছর আয়ু থেকে ওকে আরো পনেরো বছর দিয়ে দিন।
ঈশ্বর তাই করলেন। এবার মানুষের আয়ু হলো পঁচাশি বছর। মানুষ এবার শান্ত হলো। 

গল্প তো গল্পই। কিন্তু আমাদের বাস্তব জীবন বিশ্লেষণ করলে দেখা যাবে আমরা আসলে যেন মানুষ জীবন, গরু জীবন, কুকুর জীবন আর প্যাঁচার জীবনই অতিক্রম করে চলেছি। যেমন  মানুষ তার প্রথম চল্লিশ বছরই সত্যিকারের মানুষের জীবন কাটায়। তারপর তার হুঁশ হয়- আরে! গাড়ি বাড়ি কিছুই তো হলো না। তখন সে গরুর মতো খাটতে শুরু করে বাড়ি-গাড়ির জন্য। এবার শুরু হয় তার কুকুর জীবন। তার সম্পত্তি রক্ষার জন্য সে ঘেউ ঘেউ শুরু করে। সব সময় সব কিছু খবরদারি করতে করতে তার কুকুর জীবন শেষ হয়ে আসে। শুরু হয় তার প্যাঁচার  জীবন। এই  জীবনে প্যাঁচার মতো রাতে ঘুমায় না সে। আসলে তার ঘুম আসে না।  শরীরের সব কলকব্জা তখন বাতিলের দিকে। রাত জেগে ফেলে আসা জীবনের হিসাব-নিকাশ করে সে। অনেক ভুলের জন্য অনুশোচনা হয়। সে বসে বসে ভাবে আর আফসোস করে। সে তখন ঝিমায়। কেবলই ঝিমায়।

সব শেষে আমরা মানুষ জীবনের একটা সুন্দর উপসংহার টানতে পারি এ বিষয়ক একটা চমৎকার বাক্য দিয়ে। বাক্যটা অবশ্য এমন একজন মানুষের যিনি তার মানুষ জীবনে গরু, কুকুর বা প্যাঁচার জীবন ঢুকতে দেননি। তিনি বলেছেন, ‘তোমার জীবন হচ্ছে তোমাকেই খুঁজে বের করা, তুমি যে তুমিই সেটা আবিষ্কার করা!

নদী ও মানুষের জীবন

নদী ও মানুষের জীবন




আজও নদী বয়ে যায় তার আপন গতিতে। শধু মাঝে মাঝে তার গতি পথটা বদলে গেছে। কোথাও জমেছে চর আবার কোথাও বা নতুন নতুন জায়গা ভেঙ্গে গেছে নদীর দিকে অসমান ভাবে। এখন হয়তবা পানি এই নদী দিয়ে আগের মত প্রবাহিত হয় না আগের মত ক্ষর স্রোত আর নেই। আগের মত রঙ ও নেই পানির। স্বচ্ছ পানি হারিয়ে গেছে এখন শুধু পানির মধ্যে নানা ধরনের ময়লা আর আবর্জনা।
নদীর মত মানুষের জীবনটাও পরিবর্তন হয়ে গেছে। এক সময় মানুষের জীবন ছিল নদীর গতি পথের মত। আজ তা যে নির্দিষ্ট জায়গায় থাকার কথা তার থেকে অনেক দুরে। কারু হয় তবা মন ভেঙ্গে গেছে বিভিন্ন ভাবে্ , আবার বেশীর ভাগ মানুষের হৃদয়ে নদীর চরের মত অনেক দুঃখের ক্ষত তৈরী হয়েছে। কেউ নতুন নতুন গতি পথ তৈরী করে নিচ্ছে। আর মনের রঙ ওটা তো পানির রঙের মত পরিবর্তন হয়ে গেছে। আগের মত স্বচ্ছ মনের মানুষ আর নেই , মানুষের মনে এখন নানা কুটিলতা বাসা বেধেছে।তবে মনের জোয়ার ভাটা নির্দিষ্ট নিয়মে হয় কখনো হাসে কখনো কাঁদে। তার মধ্যেও মানুষের জীবন কেমন করে যেন চলছে।
মানুষ যেন নিজের নিজস্ব আচরন বিচরন থেকে অনেক পিছনে চলে গেছে। হারিয়ে ফেলছে ব্যক্তি সত্ত্বাকে।হারিয়ে ফেলছে তার মানবতা বোধকে। যেন এখানে আমরা কেউ কাউকে চিনি না। একে অপরের দুষমন বললেও ভুল হবে না। কিন্তু এমন হল কেন ?
একটা পশু আর একটা পশু যেমন আচরন করে আমরা মানুষ আর একজন মানুষের সাথে তার চেয়ে খারাপ আচরন করি। কাকে এই জীবন যুদ্ধে নিচে ফেলে উপরে উঠতে চাই ? আর নিচে ফেলে দিলেই কি জীবন যুদ্ধে জয়ী হয়ে গেলাম ? শুধু গড়ে তুলতে পাড়ি বিশাল সাম্রাজ্য ধন দৌলত। কিন্তু পরিশেষে সমাপ্তিটা হয় কেমন। তা সবাই জানে, নিরবতা নিরবতা নিরবতা। কেউ কি কোন কিছু নিয়ে যেতে পারব ঐ অজানা দেশে ? হয়তবা আমার আত্বীয় স্বজনরা সব ভোগ করবে। কিন্তু এই পাপের বুঝা কে বইবে ? আমার আত্বীয় স্বজন, না আমি নিজেই বইতে হবে ? পরকালে কি বলব ঐ বিচারকের কাছে ?
নদীত নিজে নিজে পরিবর্তন হচ্ছে না। নদীর পরিবর্তনের মাঝে মানুষের তৈরী অনেক কারন আছে। কিন্তু আমাদের এই পরিবর্তনের কারন কি ?

মানুষের জীবন শৃঙ্খলা সম্পর্কে ইমাম আলী (আঃ) এর উপদেশ

মানুষের জীবন শৃঙ্খলা সম্পর্কে ইমাম আলী (আঃ) এর উপদেশ


মানুষের জীবন শৃঙ্খলা সম্পর্কে ইমাম আলী (আঃ) এর উপদেশ
পৃথিবীতে মানুষের সুস্পষ্ট বৈশিষ্ট্যগুলোর মধ্যে একটি হলো অব্যাহতকর্মচাঞ্চল্য, এটা মানুষের ব্যক্তিজীবনের অবশ্যম্ভাবী একটি প্রয়োজনীয়তা। ইমাম আলী(আঃ) মানুষের অস্তিত্বের স্বরূপ সম্পর্কে গভীরভাবে দৃষ্টি রাখেন। এক্ষেত্রে তিনিআরেকটি বিষয়কে গুরুত্বপূর্ণ চালিকাশক্তি হিসেবে মনে করেন। সেটা হলো মানুষেরজীবনটাকে যথার্থ ও সঠিকভাবে যাপন করার জন্যে প্রয়োজন সুষ্ঠু পরিকল্পনা এবং শৃঙ্খলা।যেই শৃঙ্খলা তাকে উন্নতি ও সৌভাগ্যের পথে নিয়ে যায়। হযরত আলী (আঃ) এর মতে মানুষেরউচিত তার সময়ের একটা অংশ জীবনের কল্যাণমূলক বিষয়গুলোর জন্যে ব্যয় করা এবং আরেকটিঅংশ ব্যয় করা উচিত মানসিক স্বস্তি ও আত্মিক প্রশান্তির জন্যে। ইমাম আলী (আঃ) এর মতেমানুষের উচিত তার জীবনের একটা সময় জীবনের কল্যাণমূলক বিষয়গুলো নিশ্চিত করার জন্যেব্যয় করা এবং অপর একটা সময় ব্যয় করা উচিত আত্মিক শান্তি এবং মানসিক স্বস্তি নিশ্চিতকরার জন্যে। আর এ প্রশান্তির ব্যাপারটি একমাত্র ইবাদাত-বন্দেগী বা আল্লাহর সাথেসম্পর্ক স্থাপনের মাধ্যমেই কেবল অর্জিত হয়।
মানুষের সময়ের তৃতীয় অংশটি তার শারীরিক এবং মানসিক শক্তি লালনেরজন্যে ব্যয় করা উচিত যাতে তার জীবনের জন্যে প্রয়োজনীয় কাজকর্ম সম্পাদনের শক্তি লাভকরতে পারে। হযরত আলী (আঃ) এ সম্পর্কে বলেন,মুমিন জীবনের কর্মপরিকল্পনায় তিনটি সময়সুনির্দিষ্ট আছে। একটা হলো তার স্রষ্টার ইবাদাত-বন্দেগির সময়। দ্বিতীয় সময়টা হলোযখন সে তার জীবনযাপন ব্যয় নিশ্চিত করার জন্যে চেষ্টা-প্রচেষ্টা চালায় আর তৃতীয়সময়টা হলো তার সৎ আনন্দগুলো আস্বাদনের সময়। আজকের আলোচনায় আমরা ইমাম আলী (আঃ) এরবক্তব্যের তৃতীয় অংশটার প্রতি বেশি গুরুত্ব দেবো-যেখানে তিনি জীবনের স্বাভাবিকআনন্দ ও সুস্থ বিনোদনের ওপর গুরুত্ব দিয়েছেন। দুঃখজনকভাবে বর্তমান পৃথিবীতে মানুষদৈনন্দিন জীবন সমস্যায় এতো বেশি জর্জরিত যে,নিজের দিকে তাকাবার সময় খুব কমই মেলে।যার ফলে আমরা লক্ষ্য করবো যে মানুষ তার নিজের সম্পর্কে মানুষ উদাসীনতায় ভোগে।
আমরা লক্ষ্য করবো যে, এই উদাসীনতার পরিণতিতে ব্যক্তির মাঝেঅশান্তি-হতাশা-বিষাদগ্রস্ততা-মানসিক অবসাদ এমনভাবে বৃদ্ধি পাচ্ছে যে, এগুলো থেকেমুক্তির জন্যে সে ভুল চিত্তবিনোদনের পথ বেছে নিচ্ছে-যা তার চিন্তা-চেতনায় ডেকে আনছেনিরন্তর অবক্ষয়। আলী (আঃ) মানুষের এই চিন্তা-চেতনাগত অবক্ষয় রোধকল্পে আভ্যন্তরীণ বাআত্মিক শক্তি বৃদ্ধির ওপর জোর দিয়ে সুস্থ বিনোদনের ওপর গুরুত্ব দিয়েছেন। তিনিবলেছেন সুস্থ বিনোদনের জন্যে বই পড়া যেতে পারে যে বই মানুষের মনের খোরাক দেয়,আত্মিকএবং চিন্তাগত উৎকর্ষ সাধন করে। তিনি বলেছেন,জ্ঞান ও প্রজ্ঞাময় এবং নতুন অভিনতুনবিষয়বস্তুর মাধ্যমে নিজেদের অন্তরগুলোকে বিনোদিত করো,কেননা মনও শরীরের মতো ক্লান্তহয়ে যায়।
চিকিৎসা বিজ্ঞানের অভিমত হলো,মানুষের জন্যে একঘেঁয়ে কাজ বাএকঘেঁয়ে জীবন বিরক্তিকর এবং তা মানুষের শরীরকে অক্ষম করে তোলে। সেজন্যেই মানুষেরউচিত হলো স্বাভাবিক ও একঘেঁয়ে জীবনের ছন্দে মাঝে মাঝে কিছুটা পরিবর্তন বা বৈচিত্র্যআনা। যেমন মাঝে মাঝে প্রাকৃতিক সৌন্দর্যগুলো দেখার জন্যে ভ্রমণ করা বা এসবের ওপরপড়ালেখা করা। এগুলো অন্তরকে প্রশান্ত করে,সতেজ করে। খেলাধুলাও চমৎকার একটিবিনোদন-মাধ্যম। ইসলামে খেলাধুলার ব্যাপারে বলা হয়েছে খেলাধুলা শারীরিক শক্তি-সামর্থবৃদ্ধি করা ছাড়াও মানসিক আনন্দেরও একটি মাধ্যম।
ইসলামে মানুষের সুস্থতা রক্ষার ব্যাপারে গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। একারণেই লক্ষ্য করা যাবে ঐশী শিক্ষা মানুষের জন্যে প্রাণদায়ী। যেমন রোযা অসুস্থব্যক্তির ওপর হারাম। একইভাবে মাদক যেহেতু মানুষের শরীর মনের জন্যে খুবই ক্ষতিকর এবংজীবন চলার পথকে স্থবির কিংবা একবারে বন্ধই করে দেয় সেজন্যে ইসলাম মাদকদ্রব্যেরব্যাপারে তিরষ্কৃত এমনকি ভর্ৎসনা করা হয়েছে। মানুষের মনোদৈহিক স্বাস্থ্যের ব্যাপারেইমাম আলী (আঃ) ব্যাপক গুরুত্ব দিয়ে বলেছেন, বিমর্ষ বা মাতাল ব্যক্তিদের ওপর আস্থারেখো না। তিনি মুমিনদেরকে সুস্থ-সবল দেহের অধিকারী হবার জন্যে অনুপ্রাণিত করেছেন!আলী (আঃ) নিজেও ছিলেন আধ্যাত্মিক শক্তির বাইরেও সুস্থ-সবল দেহের অধিকারী। নবীজীরযে-কোনো আদেশ পালনের জন্যে তিনি ছিলেন পরিপূর্ণভাবে সক্ষম।
নাহজুল বালাগায় নিরাপত্তা বিষয়ে হযরত আলী (আঃ) এর গুরুত্বপূর্ণ বহু বক্তব্য
নাহজুল বালাগায় নিরাপত্তা বিষয়ে হযরত আলী (আঃ) এর গুরুত্বপূর্ণ বহু বক্তব্য ওদৃষ্টিভঙ্গি সংকলিত হয়েছে
সমাজের জ্ঞানী-গুণী মনীষীদের দৃষ্টিতে যুগ যুগ ধরে সামাজিক নিরাপত্তা, ন্যায়-বিচারএবং স্বাধীনতার বিষয়টি গুরুত্ব পেয়ে এসেছে। ধর্মীয় দৃষ্টিতে নিরাপত্তা জীবনের মৌলিকদিকগুলোর একটি এবং সামজিক স্থিতিশীলতার একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান আর মানব উন্নয়ন ওবিকাশের অনিবার্য ক্ষেত্র সৃষ্টিকারী। এ কারণেই মানুষের একটি পবিত্রতম প্রত্যাশাহলো এই নিরাপত্তা। আল্লাহর পক্ষ থেকে পূণ্যবানদের সমাজের জন্যে সুসংবাদ হিসেবেনিরাপত্তার কথা বলা হয়েছে। পবিত্র কোরআনের সূরা নূরের ৫৫ নম্বর আয়াতে বলা হয়েছেঃ"তোমাদের মধ্যে যারা ঈমান এনেছে এবং সৎ কাজ করেছে আল্লাহ তাদের এই প্রতিশ্রুতিদিচ্ছেন যে,পৃথিবীতে তিনি তাদেরকে প্রতিনিধিত্ব বা খেলাফত দান করবেনই যেমন তিনিতাদের পূর্ববর্তীদের প্রতিনিধিত্ব দান করেছিলেন। তিনি তাদের জন্যে তাঁর মনোনীতদ্বীনকে সুদৃঢ় ভিত্তির ওপর দাঁড় করিয়ে দেবেন এবং তাদের ভয়-ভীতির অবস্থাকে শান্তি আরনিরাপত্তামূলক অবস্থায় পরিবর্তিত করে দেবেন।"
মানুষের এই প্রাচীন আকাঙ্ক্ষাঅর্থাৎ নিরাপত্তা তার অস্তিত্বের সাথেই অঙ্গাঙ্গীভাবে জড়িয়ে আছে। জীবন যাপনেরপ্রয়োজনে মানুষ পরস্পরের সাথে বিভিন্ন ব্যাপারে জড়িয়ে পড়ে এবং এভাবেই একটি সমাজবিনির্মাণ করে। তাদের এই সমাজ গঠনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ লক্ষ্যটি হলো ন্যায় ওনিরাপত্তা প্রতিষ্ঠা করাহযরত আলী (আঃ) নাহজুল বালাগা'য় বলেছেন ইতিহাসের কাল-পরিক্রমায় রাষ্ট্র গঠন কিংবাসরকার গঠনের একটা গুরুত্বপূর্ণ কারণ হলো সার্বিক নিরাপত্তা প্রতিষ্ঠা করা। একথাসর্বজন বিদিত যে ইমাম আলী (আঃ) ক্ষমতার মসনদ বা আধিপত্য বিস্তারের লক্ষ্যেশাসনকার্য পরিচালনা করেন নি, বরং তিনি এমন একটি সরকার ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করারচেষ্টা করেছেন যার ছত্রছায়ায় মানুষের জান-মালের নিরাপত্তা নিশ্চিত হয়,অপরের অধিকারনষ্ট করার পথে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি হয়,জনগণ নিজেদের সীমান্ত রক্ষা করে শত্রুদেরমোকাবেলার মাধ্যমে আর্থ-সামাজিক-সাংস্কৃতিক ও রাজনৈতিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করারচেষ্টা চালায়
হযরত আলী (আঃ) অবশ্য এই বক্তব্যটি রেখেছিলেন খারজিদের কথা মাথায় রেখে-যারা হযরত আলী(আঃ) এর হুকুমাতকে ধ্বংস করার চেষ্টা করেছিল। নাহজুল বালাগায় তিনি বলেছেন-"তারা বলেহুকুমাত,বিচার বা শাসন-কর্তৃত্বের মালিক একমাত্র আল্লাহ। এ কথা সত্য। আরো সত্য যেমানুষ-চাই শাসক ভালো হোক কিংবা মন্দ-শাসকের মুখাপেক্ষী। মুমিন ব্যক্তিগণ হুকুমাতেরছায়ায় নিজেদের কাজে মশহুল হয় আর অমুসলিমরা তা থেকে উপকৃত হয়। হুকুমাতের কল্যাণেশান্তি ও স্থিতিশীলতা প্রতিষ্ঠিত হয়। একইভাবে হুকুমাতের মাধ্যমেই বায়তুল মাল আদায়হয়,শত্রুর বিরুদ্ধে লড়াই হয়,রাস্তাঘাট সুরক্ষিত হয়,সবলের হাত থেকে দুর্বল তারঅধিকার রক্ষা করতে পারে। আর এগুলো সম্ভব হয় তখন যখন পুণ্যবানরা শান্তি ও নিরাপত্তারমধ্যে জীবনযাপন করতে পারে এবং বাজে লোকদের হাত থেকে নিরাপদ থাকে।
হযরত আলী (আঃ) এ কারণেই নিরাপত্ত প্রতিষ্ঠা করাকে সরকারের দায়িত্ববলে মনে করতেন এবং আল্লাহর পক্ষ থেকে নিরাপত্তাকে একটি নিয়ামত হিসেবে গণ্য করতেন।তাঁর দৃষ্টিতে নিরাপত্তা প্রতিষ্ঠার মৌলিক শক্তি হলো আল্লাহ এবং ইসলামের প্রতিঈমান। নাহজুল বালাগায় এসেছে-সকল প্রশংসা আল্লাহর,যিনি ইসলাম প্রতিষ্ঠা করেছেন এবংসহজ পথের নির্দেশনা দিয়েছেন ইসলাম ধর্মের অন্তর্ভুক্ত হবার জন্যে। তিনি ইসলামেরস্তম্ভ করেছেন সুদৃঢ় যাতে কেউ একে ধ্বংস করতে না পারে। যারা ইসলামকে অবলম্বন করেছেতাদের জন্যে মহান আল্লাহ ইসলামকে করেছেন শান্তির উৎস। যারা বিশ্বাস স্থাপন করতে চায়তাদের অন্তরে দিয়েছেন বিশ্বস্ততা,যারা ইসলামের ওপর নির্ভর করতে চায় তাদের জন্যেদিয়েছেন আনন্দ। যে বিপদ থেকে মুক্ত থাকতে চায় ইসলামকে তার জন্যে করেছেনঢালস্বরূপ।
আলী (আঃ) এর দৃষ্টিতে একটি দেশে এমন পরিস্থিতি বিরাজ করা উচিতযেখানে কোনো মানুষের ব্যক্তিগত নিরাপত্তা বিঘিœত না হয়।তার মানে সমাজের প্রত্যেকটিমানুষের ব্যক্তিগত স্বাধীনতা ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করা একটি দেশের সরকারের মৌলিকএকটি দায়িত্ব।এ বিষয়টির ওপর গুরুত্ব দিয়ে হযরত আলী (আঃ) বিভিন্ন প্রসঙ্গে কথা বলেছেন। এখানে আমরানাহজুল বালাগা থেকে একটি ছোট্ট উদ্ধৃতি দিচ্ছি। ইমাম বলেছেন-চেষ্টা করো সততা ওমূল্যবোধের ওপর প্রতিষ্ঠিত থাকার। প্রতিশ্রুতি রক্ষার ব্যাপারে বিশ্বস্ত থেকো। সৎপথ অনুসরণ করো। অহমিকা থেকে দূরে থেকো। আগ্রাসন বা সীমালঙ্ঘন করা থেকে বিরত থেকোইত্যাদি
মুসলমানদের এই মহান নেতা মানুষের জান-মালের হেফাজত করা এবং সম্মান রক্ষা করাকেওব্যক্তিগত নিরাপত্তার অংশ বলে মনে করেন। সেজন্যে তিনি তাঁর বক্তব্যে কিংবা উপদেশেমানুষের সম্মান ও মর্যাদা রক্ষার ওপর গুরুত্ব দিয়েছেন। আলী (আঃ) তাঁর শাসনকালে যখনশুনতে পেলেন যে একদল লোক মানুষের নিরাপত্তা বিঘিœত করছে এবং তাঁরই শাসিত এলাকারভেতর ইহুদি এক মহিলা লাঞ্ছিত হয়েছে,তিনি ভীষণ বিরক্ত হয়ে বললেন-এই ঘটনায় শোকে-দুঃখেকেউ যদি মরেও যায়,তাহলে তাকে তিরষ্কৃত করা হবে না।

মানুষের জীবনে এত কষ্ট কেন?

মানুষের জীবনে এত কষ্ট কেন?

একটা টি-শার্ট ৪ বছর পরার পর যখন
বগলতলার অংশ
ছিড়ে যায়। তখনও যেই ছেলেটা বলে।
থাক, আর কয়দিন পরে একটা টি-শার্ট
কিনবো, চলেতো? - সেই ছেলটাই
মধ্যবিত্ত" যেই ছেলেটা, ১৫ টাকার
সি,এন,জি ভাড়া বাঁচিয়ে ১০ কিলো
রাস্তা অনায়াসে হাওয়া খেয়ে
পায়ে হেটে প্রতিদিন যাতায়াত
করে: -
সেই ছেলেটাই মধ্যবিত্ত: যে
ছেলেটার পকেট শূণ্য হওয়ার পরও,
ফ্যামিলিতে সব টাকা দিয়ে
বলে,নাহ,
আমার কাছে পর্যাপ্ত টাকা আছে।
লাগবেনা চলবে, -
সেই ছেলটাই মধ্যবিত্ত: "নিজের
সবচেয়ে পছন্দের জিনিষ নষ্ট হওয়ার পরও
যে বন্ধুকে বলে। ধুর, শালা রাম ছাগল
,এ্যাইডা আর এমন কি,? তুই
চাইলে তো আমার জান হাজির, -সেই
ছেলেটাই মধ্যবিত্ত: "যে ছেলেটা
বনফুলের মতো ফার্ষ্টশপে সাজানো,
বার্গার, লাচ্চি দেখে, একটু দুরে, চা
ষ্টলে এসে বনরুটি পানি, খেয়ে
বার্গার,লাচ্চির স্বাদ নেয়। -সেই
ছেলেটাই মধ্যবিত্ত: "যে ছেলেটার ৪
বছর ব্যবহার করা জাভা
মোবাইলের কিপ্যাড গুলো উঠে
গেছে, রাতে ভাবে, কাল একটা
এণ্ড্রয়েড কিনেই ফেলবো, কিন্তু ভোর
হওয়ার পর ভাবে চলছে, আর কয়টা দিন
চলুক,নাঃ -সেই ছেলেটাই মধ্যবিত্ত: -
যে ছেলেটা নিজের শত কষ্ট বুকে ধারণ
করে, মা বাবা. .পাড়া. প্রতিবেশী.
ভাই বন্ধুদের মুখে হাসি ফুটায়, -সেই
ছেলেটাই মধ্যবিত্ত: "এক কথায় যে
ছেলেটা নিঃস্বার্থভাবে আজীবন
সেক্রিফাইজ করে চলে, -
সেই ছেলেটাই মধ্যবিত্ত!

৫০ ফুট লম্বা যে সাপ দাপিয়ে বেড়াত পৃথিবী

৫০ ফুট লম্বা যে সাপ দাপিয়ে বেড়াত পৃথিবী!

মানুষ মানুষের জন্য, জীবন জীবনের জন্য- এর ছবি

দক্ষিণ আমেরিকার জঙ্গল দাপিয়ে বেড়াত সাপটি। রীতিমতো সন্ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করত সে। ১৪ মিটার (প্রায় ৫০ ফুট) লম্বা ও এক টনের বেশি ওজন হলে যা হতে পারে আর কি!
না, দুই-চার-দশ বছর নয়, ভয়ানক এই সরীসৃপের অস্তিত্ব ছিল প্রাগৈতিহাসিক যুগে—প্রায় পাঁচ কোটি ৮০ লাখ বছর আগে বিচরণ করত এ সাপ। সমপ্রতি উত্তর কলম্বিয়ার একটি খনিতে পাওয়া গেছে এর ফসিল বা জীবাশ্ম। সাপটি এতই বিশাল আকৃতির যে আস্ত একটি কুমির গিলে ফেললেও তার পেট দেখে তা বোঝা যেত না। এর নাম দেওয়া হয়েছে ‘টাইটানোবোয়া’।
মজার ব্যাপার হচ্ছে, কয়েক বছর আগেও বিজ্ঞানীরা এ সাপটির ব্যাপারে কিছুই জানতেন না। সমপ্রতি ফসিলটির সন্ধান পাওয়া গেছে।
স্মিথসোনিয়ান ট্রপিক্যাল রিসার্চ ইনস্টিটিউটের বিজ্ঞানী কার্লোস জারামিলো বলেন, ‘স্বপ্নেও কি আমরা ১৪ মিটার লম্বা অজগর দেখি? আজকের যুগের সবচেয়ে বড় সাপটিও এর অর্ধেক।’ কার্লোসের দলটিই ফসিলটি আবিষ্কার করেছে।
ধারণা করা হচ্ছে, দক্ষিণ আমেরিকার অজগরজাতীয় সাপ বোয়া কন্সট্রিক্টর ও অ্যানাকোন্ডার বংশধর টাইটানোবোয়া। সাপটি বিষধর ছিল না, তবে এটি তার শিকারকে প্রচণ্ড শক্তি দিয়ে দুমড়েমুচড়ে ফেলত। এর চাপের শক্তি ছিল প্রতি বর্গইঞ্চিতে ৪০০ পাউন্ড ওজনের সমান।
টাইটানোবোয়ার ফসিল আবিষ্কারের ফলে বিজ্ঞানীরা পৃথিবীর জলবায়ুর ইতিহাস ও বৈশ্বিক উষ্ণতা বৃদ্ধির গবেষণায় কিছু প্রয়োজনীয় সূত্র পেতে পারেন। কেননা, সাপ নিজের শরীরের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ করতে পারে না। বেঁচে থাকার জন্য বাইরের তাপের ওপর নির্ভর করে।
ব্লোচ বলেন, ‘ছয় কোটি বছর আগে ডাইনোসর বিলুপ্তির পর বিষুবরেখায় অনেক বেশি তাপমাত্রা ছিল। এ কারণেই টাইটানোবোয়া আকারে এত বড় হতো। বিশেষ করে সরীসৃপজাতীয় প্রাণীর বড় হওয়ার এটাই কারণ।’ পৃথিবীর উষ্ণতা আবার বাড়ছে। তা হলে কি টাইটানোবোয়া ফিরে আসতে পারে?

মানুষ মানুষের জন্য

মানুষ মানুষের জন্য



আমাদের যুবসমাজে যখন মূল্যবোধের চরম অবক্ষয় চলছে, তখন ‘সুড়ঙ্গের অপর প্রান্তে ক্ষীণ আলোর রেখা’র মতো কিছু ঘটনা আমাকে আশাবাদী করে। সাভারে রানা প্লাজার উদ্ধারকাজের সময় সবে কৈশোর উত্তীর্ণ তরুণ শুভ ও তার ফেসবুক বন্ধুরা হতাহতদের নানাভাবে সাহায্য করার পাশাপাশি একটি এতিম শিশুকে পরম স্নেহে কোলে তুলে নিয়ে তাকে মানুষ করার দৃপ্ত শপথ গ্রহণ করে এবং দুই লাখ টাকার একটি ফান্ড গঠন করে। এখন প্রতি মাসে ওরা ওই বাচ্চার জন্য আট হাজার টাকা খরচ করে।
মানবতার কী অপূর্ব নিদর্শন। আমাদের যুবসমাজের মধ্যে অফুরন্ত মানবিক গুণাবলি রয়েছে, তা এমনভাবেই বিকশিত হোক। এরাই হোক একটি সুন্দর বাংলাদেশ বিনির্মাণের অগ্রদূত।

শনিবার, ১২ সেপ্টেম্বর, ২০১৫

এলিয়ন ম্যাগাপ্রভিন্স

এলিয়ন ম্যাগাপ্রভিন্স

এলিয়ন ম্যাগাপ্রভিন্স

এক.
মঙ্গলমান ‘দিবালোক’ তিপ্পান্নটা শূন্য মিনিট পনের সেকেন্ড। এসসি-টোয়েন্টি ফাইভ এটেনডিয়ার এলিয়ন তখনও নিষ্ঠার সাথে পৃথিবী থেকে পাঠানো ইনটেনসিটি গ্রাফ অপারেট করে চলেছেন। এভাবেই টানা পঞ্চাশ ঘণ্টা ডিউটি শেষ করে ‘নিশিলোক’ শুরু হলে তাকে একশটা শূন্য মিনিট শূন্য সেকেন্ডে শিফট থেকে বিদায় নিতে হবে।
এলিয়নদের ম্যাগাপ্রভিন্সে যারা কাজ করেন তাদের এ নিয়মটা মেনে চলতেই হয়। এখানে পৃথিবীর মতোই সেকেন্ডের একক মান এক। কিন্তু একশ সেকেন্ডে হয় এক মিনিট আর একশ মিনিটে হয় এক ঘণ্টা। এই ঘণ্টার হিসাব মেপে দিন-রাতের তিন ভাগের এক ভাগ মানে পঞ্চাশ ঘণ্টা ‘দিবালোক’-এ ডিউটি করা প্রিমিয়ার এলিয়ন থেকে সাধারণ এলিয়ন কর্মী পর্যন্ত সবার জন্য বাধ্যতামূলক।
কারণ এখানে মোট দেড় শ’ ঘণ্টায় হয় পূর্ণ একদিন। এই দিনের সূচনাটা হয় ‘শূন্য-শূন্য-শূন্য’ মান ধরে। অর্থাৎ চব্বিশ আওয়ার ধরে যেমনি গ্রিনিচমান সময়ে দিনের হিসাব চলে তেমনি এলিয়নদের ম্যাগাপ্রভিন্সে টানা একশ পঞ্চাশ আওয়ার ধরে দিনের হিসাব চলে। ওই হিসেবে এলিয়নদের ‘মঙ্গলমান দিনের’ এক তৃতীয়াংশ মানে ‘নিশিলোক’ কাটে বিনোদন, বিশ্রাম আর স্বাস্থ্যপরিচর্যায়। বাকি পঞ্চাশ ঘণ্টা অর্থাৎ ‘মেঘুলিলোক’ এলিয়নদের জন্য বরাদ্দ করা আছে ইবাদত, জ্ঞানচর্চা আর পারস্পরিক মতবিনিময়ের জন্য।
ফলে ছকবাঁধা দিনাতিপাতের মাঝেও ম্যাগাপ্রভিন্সের ‘দিবালোকে’ যেমনি কোনো কর্মফাঁকির সুযোগ নেই, তেমনি সরকারের পক্ষ থেকে এলিয়নদের প্রতি ইনসাফেরও ঘাটতি নেই। এলিয়নদের মৌলিক সব চাহিদা পূরণ করেন মঙ্গলমান সরকার। পৃথিবীর চব্বিশ ঘণ্টা দিনে রাতে বিভক্ত হলেও এলিয়নদের ম্যাগাপ্রভিন্সে সূর্যের প্রখর তাপে উজ্জ্বল আলোর ভেতর দিয়ে পঞ্চাশ ঘণ্টায় এই ‘দিবালোক’ পেরোয়।
এরপর শুরু হয় টানা পঞ্চাশ ঘণ্টার ‘নিশিলোক’। এ সময়টি বিনোদন, বিশ্রাম, স্বাস্থ্যপরিচর্যা আর গভীর ঘুমে কাটিয়ে দেয় এলিয়নরা। তখন তাদের ম্যাগাপ্রভিন্সের পুরো নিরাপত্তার দায়িত্ব সামাল দেয় রোবো ডিফেন্স স্কোয়াড। সংক্ষেপে এর নাম ‘রোডিস্কো’। এই ‘রোডিস্কো’ নামক স্কোয়াড মানে পৃথিবীর মতো ছোটখাটো কোন নিরাপত্তা বা প্রতিরক্ষা ইউনিট নয়। সারা পৃথিবীর সামরিক শক্তিকে একত্র করলেও এই স্কোয়াডের সামনে এক ঘণ্টা টিকে থাকার শক্তি নেই। ফলে পৃথিবী থেকে প্রায় চার শ’ আলোকবর্ষ দূরে অবস্থিত ও পৃথিবী থেকে এক হাজার গুণ বড় এলিয়নদের ম্যাগাপ্রভিন্সের এলিয়নরা নিশ্চিন্তে নাক ডেকে রাতভর শান্তিতে ঘুমোতে পারে।
তাদের এই ‘নিশিলোক’ শেষ হলে শুরু হয়ে যায় পঞ্চাশ ঘণ্টার ‘মেঘুলিলোক’। তখন এলিয়নদের আনন্দের সীমা থাকে না। এসময়টায় এলিয়নদের ম্যাগাপ্রভিন্সের আকাশে থাকে চাঁদের আলোর মিষ্টি আমেজ, আকাশজুড়ে ভেসে বেড়ায় হাজারো রঙের মেঘরাশি। অথচ এসব মেঘ মিষ্টি চাঁদোয়াকে এক পলকের জন্যও ছেয়ে ফেলে না। পৃথিবীতে মূষলধারায় বৃষ্টি হয়ে যাবার পর যেমন নির্মল ও ধূলিমুক্ত বাতাস খেলা করে- এ সময়টিতে এখানেও থাকে তেমনি সুনসান হাওয়া। না গরম, না ঠান্ডা। কেমন একটা জান্নাতি পরিবেশ যেন ছড়িয়ে পড়ে। তাই এলিয়নরা ‘মেঘুলিলোক’কে বেছে নিয়েছে ইবাদত, জ্ঞানচর্চা আর পারস্পরিক মতবিনিময়ের মোক্ষম সময় হিসেবে। এভাবে পঞ্চাশ ঘণ্টা পেরিয়ে শেষ হয় ‘মেঘুলিলোক’। আবার শুরু হয় ‘দিবালোক।
এভাবেই লাখ লাখ বছর ধরে চলে আসছে এলিয়নদের মহাজাগতিক রাজ্য। যাকে ওরা বলে ‘এলিয়ন ম্যাগাপ্রভিন্স’।
তো ‘দিবালোকে’ এসসি- টোয়েন্টি ফাইভ এটেনডিয়ার এলিয়ন যখন নিষ্ঠার সাথে পৃথিবী থেকে পাঠানো ইনটেনসিটি গ্রাফ অপারেটিং নিয়ে ব্যস্ত, অমনি সময় তার সিক্সটিন বেনোবাইট কনবিউডারের রাডারাইট লেসারো মিটারে একটা লাল রঙের ইনফো বারবার নির্দিষ্ট ডেনসিটিতে বিপ বিপ আওয়াজ দিতে থাকে। প্রথমে এটেনডিয়ার বিষয়টিকে তেমন আমলে আনেননি। কিন্তু কয়েকবার যখন একই ঘটনা ঘটতে থাকে তখন টান টান উত্তেজনা নিয়ে এটেনডিয়ার ওই অংশটুকুর একটা মাইক্রো রিডিং ডাউনলোড নিয়ে নেন।
তারপর কী মনে করে ইনটেনসিটি গ্রাফের অটো রান দিয়ে তাকে সিসি রেকর্ডিং-এ রেখে তিনি ডাউনলোডটির রিভিউ দেখতে শুরু করেন। অমনি তার সামনে পরিষ্কার হয়ে যায় এর রহস্য। ফলে উত্তেজনায় প্রথমত কাঁপতে থাকে এলিয়নের হাত। এক সেকেন্ড দুটো চোখ বন্ধ করে একটু ভাবেন। তারপর বিপুল উৎসাহ আর কৃতিত্বের দর্প নিয়ে ছুটে চলেন তার বিগবস মেমোন্টিয়ারের চেম্বারের দিকে।
দুই. এটেনডিয়ার এলিয়ন হাঁপাতে হাঁপাতেই মেমোন্টিয়ার এলিয়নের টিউবচেম্বারে ঢুকে পড়েন। কিন্তু মেমোন্টিয়ারের রুক্ষ কঠিন চেহারা আর দপ দপ করে জ্বলতে-নিভতে থাকা লাল টকটকে চোখের দিকে তাকিয়ে থ হয়ে যান। মেমোন্টিয়ারের রুক্ষ কঠিন চেহারা দেখে এটেনডিয়ার এলিয়নের মুখ থেকে টুঁ শব্দটিও বেরোয় না। পরিস্থিতির কারণে তার মাথার পেছন থেকে সেভেন্থ জেনারেশনের সুপার সেনসেটিভ অ্যান্টেনার ইঞ্চি তিনেক বেরিয়ে আসে। অ্যান্টেনা তার ব্রেনের সেন্সর ডিভাইসে একটা জটিল সঙ্কেত পাঠাতে থাকে। সঙ্কেতটা এলিয়ন ঠিক বুঝে উঠতে পারেন না। তার মনে হয়, একটা চুম্বকীয় শক্তি তার পা দুটোকে টিউবচেম্বারের ফ্লোরের সাথে আটকে দিয়েছে। এখন পেছনে হটে চেম্বার থেকে যে বেরিয়ে যাবেন সে শক্তিটুকুও পাচ্ছেন না।
হঠাৎ তার চোখে চোখ রেখে কটমটে দৃষ্টি ফেলে মেমোন্টিয়ার উঠে দাঁড়ান। বেশ খানিকটা সময় ধরে এটেনডিয়ারের মাথা থেকে পা অবধি পর্যবেক্ষণ করেন। তারপর ফিক করে একগাল হেসে আবার বসে যান নিজের আসনে। মেমোন্টিয়ারের এমন অদ্ভুত আচরণের আগামাথা এটেনডিয়ারের বুঝে আসে না। তিনি বোকার মত একটা আসন টেনে ধীরলয়ে বসতে বসতে বললেন, স্যার, আমার ব্রেনের ডিভাইস সম্ভবত ঠিকমত কাজ করছে না। নাহলে…
তার আর কিছু বলা হলো না। মেমোন্টিয়ার শান্ত কণ্ঠে বললেন- ডোন্ট ওরি মাই ডিয়ার। তোমার ব্রেনের ডিভাইস ঠিকমত কাজ করছে বলেই ইনটেনসিটি গ্রাফের কাজটা অটোরানে রেখে সিসি রেকর্ডিংয়ে ছেড়ে আসতে পেরেছো। নইলে আজ তোমার চাকরিটা আর বাঁচানো যেত না। তবে তুমি এখানে না এলেও চলতো। আমি ইতোমধ্যেই প্লানেট ওয়েভ থেকে তোমার কাছে পাঠানো ইনফরমেশনটার বিস্তারিত জেনেছি। আর সেজন্য যা ব্যবস্থা নেবার সেটাও নিয়ে সেরেছি। শুধু অপেক্ষা করছিলাম মহামান্য প্রিমিয়ার কখন সময় বরাদ্দ করেন।
এটেনডিয়ার এলিয়ন এবার উৎসাহ নিয়ে প্রশ্ন করেন- স্যার, মাইক্রো রিডিং থেকে যা বুঝলাম মানব সভ্যতার ইতিহাসের একটা বিতর্কের অবসানে এটা আমাদের কাজে আসবে।
– তা আসবে বটে! তবে মানুষ তো। খুবই ঘোরেল প্রাণী। জেনে বুঝে সত্যকে অস্বীকার আর গোপন করতে ওরা খুব পারঙ্গম। এক পলকেই অর্থ-বিত্ত আর ক্ষমতার কাছে নিজের মাথাটা বিক্রি করে দিতে আধা সেকেন্ডও ভাবনা করে না। সম্পদ এবং খ্যাতির লোলুপ আর কাকে বলে!
– কিন্তু স্যার, বিশ্বাসী মানুষ তো মোটেও ওদের মতো নয়। জীবন দেবে তো মিথ্যার কাছে মাথা নোয়াবে না। কোনো লোভ-লালসায় টলবে না। নিজে কোনো অন্যায় করবে না কিন্তু কোনো রকম অন্যায় দেখলেই প্রতিবাদ করবে।
– রাইট! তুমি পারফেক্ট কথাটাই বলেছ। আসলে অবিশ্বাসীরাই লোভ-লালসায় টালমাটাল হয়ে পড়ে।
– সে জন্যই তো ওদেরই পূর্বসূরি এক বশংবদ লজ্জা-শরমের মাথা খেয়ে প্রচার করে দিলো মানুষের পূর্বপুরুষ নাকি বানর ছিলো!
– আরে, আর রেখে ঢেকে বলছো কেন? আমরা তো এরই মধ্যে সেই মূর্খ ডারউইনের সপ্তদশ উত্তরসূরি হ্যারিসন পটারকে ধরে এনে সাইজ করে রেখেছি। এদিকে আজকে ধরা দিয়েছে অবিশ্বাসী ভ্রান্ত মানুষদের আরেক গোদা রাফায়েল বার্তে।
– ইয়েস স্যার, এই ইহুদি ব্যাটা দুনিয়ার বিশ্বাসী মানুষদের বিভ্রান্ত করতে গবেষণার ছলনায় একটা ডাহা মিথ্যাকে দুনিয়াজুড়ে চাউর করে দিয়েছে। তা হলো দুনিয়াতে মানুষের বসবাস নাকি কোটি কোটি বছর ধরে!
– মূর্খ আর কাকে বলে! আসলে ওরা জেনে বুঝেই এসব করছে। কারণ, ওরা যখন দেখতে পাচ্ছে দুনিয়ার বিশ্বাসীরা কেমন যেন আলসে কুড়ের বাদশাহ বনে গেছে। সৃষ্টি জগৎ নিয়ে গবেষণায় মনোযোগ দিচ্ছে না। গভীরভাবে পড়াশুনাও করছে না। বিশেষ করে বিশ্বাসীদের মাঝে মুসলিম জাতি এ ব্যাপারে আরও একধাপ এগিয়ে। গৎবাঁধা কিছু ইবাদত আর আরাম আয়েশ নিয়েই ব্যস্ত। ইহুদি-নাসারা আর বিভিন্ন সম্প্রদায়ের ভেতরকার অবিশ্বাসীরা সে সুযোগটাই নিচ্ছে। দুনিয়াজুড়ে সৃষ্টিজগৎ সম্পর্কে ওদের খেয়াল খুশিমত ভ্রান্ত ধারণা ছড়িয়ে এসব আলসে কুড়েদের আরও কাবু করে দিচ্ছে।
– অথচ বিশ্বাসীরা যদি একটু মনোযোগের সাথে কেবলমাত্র আল কুরআন রিসার্চ করতো, তাহলে অবিশ্বাসীদের সব বিভ্রান্তিরই দাঁতভাঙা জবাব দিয়ে দিতে পারতো।
– রাইট! তুমি যথার্থই বলেছো মিস্টার এটেনডিয়ার।
– জি স্যার, আ’অ্যাম এসসি- টোয়েন্টি ফাইভ এটেনডিয়ার এলিয়ন ইন দিস ম্যাগাপ্রভিন্স।
– ইয়েস, এসসি-টোয়েন্টি ফাইভ! সে কথাই বলছি। তবে এবার যখন অবিশ্বাসীদের পালের দুই গোদাকে পাকড়াও করে আনা সম্ভব হয়েছে তো, দুনিয়া থেকে আমাদের ম্যাগাপ্রভিন্সে বেড়াতে আসা বিশ্বাসী বন্ধু মিস্টার এসএমএম আকবরজির মাধ্যমে ওদের স্বীকারোক্তিগুলো দুনিয়ার মানুষের কাছে পৌঁছে দেয়া যাবে।
তিন. এতক্ষণ রাউন্ড প্লানেট টিউব রুমে বেশ আয়েশের সাথে বসে বসে আমি মিস্টার মেমোন্টিয়ার এবং মিস্টার এটেনডিয়ারের কথাবার্তা ভিজুয়ালি দেখতে এবং শুনতে পাচ্ছিলাম। তাতে বেশ মজাও পাচ্ছিলাম। কিন্তু হঠাৎ করে মেমোন্টিয়ারের মুখে আমার নামটা উচ্চারিত হওয়ায় একটু নড়ে চড়ে বসলাম। দেখলাম প্লানেটের লেসার স্ক্রিনের মাধ্যমে মিস্টার এটেনডিয়ার এবার আমার দিকে তাকিয়ে মুচকি হেসে বললেন- আস্সালামু আলাইকুম স্যার।
আমিও ওয়ালাইকুম আস্সালাম বলে আরও একটু নড়ে চড়ে বসলাম। ততক্ষণে মোমেন্টিয়ার একটা ডিভাইসের মাধ্যমে তার টিউব চেম্বারের সাথে অতিথি টিউব চেম্বারকে জুড়ে দিয়েছেন। আমি এখানে পৌঁছা অবধি যতটা অবাক হয়েছিলাম এখন তারচেয়েও অবাক হতে হলো। দেখতে দেখতেই আমরা তিনজন এখন মুখোমুখি বসে আছি! এটা কেমন করে সম্ভব হলো, কিছু বুঝতেই না পেরে খানিকটা হতভম্ব হয়ে রইলাম।
মোমেন্টিয়ার আমার মনোভাবটা হয়তো বুঝতে পেরেছিলেন। তিনি মুচকি হেসে বললেন, অবাক হচ্ছেন বন্ধু। সামনে আরও বিস্ময় অপেক্ষা করছে। আসলে বুঝতেই তো পারছেন, আমরা মানবজাতি থেকে জ্ঞান-বিজ্ঞানে কতোটা অগ্রসর। কিন্তু মহান স্রষ্টার আদেশ তো আমাদের মানতেই হবে। তাঁর সৃষ্টি জগতের মাঝে আপনারাই হলেন শ্রেষ্ঠতম। সে কারণেই আপনাদের মাঝে যারা সব দেখে শুনে জ্ঞানপাপীর ভূমিকায় অবতীর্ণ তাদেরকে আমরা মোটেও পছন্দ করি না। দুনিয়াতে ওদের মাধ্যমে সত্যের যে অপলাপ হয় তাকেও আমরা প্রচন্ডভাবে ঘৃণা করি। শত বছর ধরে এসব মূর্খদের আমরা সহ্য করে আসছি। এবার আমাদের মহামান্য প্রিমিয়ারের হুকুম হয়েছে কিছুটা অ্যাকশনে যাবার। তাই আপনাকে দাওয়াত করে নিয়ে এলাম। আমাদের আদালতে যে বিচার কাজটুকু অনুষ্ঠিত হবে তার ফলাফল আপনি গোটা মানবজাতির কাছে প্রামাণ্য দলিল হিসেবে পৌঁছে দেবেন।
চার. এবার আমরা মানে আমি, মোমেন্টিয়ার, এসসি-টোয়েন্টি ফাইভ এলিয়নসহ আরও তিনজন এটেনডিয়ার মুখোমুখি বসেছি মাননীয় এলিয়ন সুপ্রিম আদালতে। এ আদালত দুনিয়ার আদালতের মত নয়। এখানে সর্বোচ্চ বিচারক হলেন খোদ মহামান্য প্রিমিয়ার! আর আসামিদের জন্যও আলাদা কোনো কাঠগড়া নেই। সমান মর্যাদার ও সমান্তরাল অবস্থানে একটা রাউন্ডটেবিলের চারপাশ ঘিরে সাজানো আসনে সবাই উপবিষ্ট। তবে প্রিমিয়ারের আসনের পেছনে একটা সবুজ ফোকাস মৃদু আলো ছড়িয়ে রেখেছে, এই যা। একেবারে সিম্পল আদালত। দেখে মনে হচ্ছে একটা সুসজ্জিত রাজকীয় রাউন্ডটেবিল মিটিং অনুষ্ঠিত হতে চলেছে।
লক্ষ্য করে দেখলাম, আমার ঠিক অপর পাশে কিছুটা চিন্তিত হয়ে বসে আছেন দু’জন মানুষ। বুঝে নিলাম ওনাদেরকেই দুনিয়া থেকে তুলে আনা হয়েছে। তার মানে আজকের আদালতে ওনারাই আসামি। এমনি সময় মনপ্রাণ আকুল করা একটা মিষ্টি টোন সারাটি আদালত কক্ষজুড়ে ঝঙ্কার ছড়িয়ে দিলো। মেমোন্টিয়ারসহ সকলেই উঠে দাঁড়ালেন। আমিও দাঁড়িয়ে গেলাম। মোমেন্টিয়ার বিনয়ের সাথে বললেন- আপনার দাঁড়ানোর কোনো প্রয়োজন নেই বন্ধু। আমাদের এই ম্যাগাপ্রভিন্সে বিশ্বাসী মানুষের সম্মান আমাদের মহামান্য প্রিমিয়ার থেকেও বেশি।
মোমেন্টিয়ারের কথা শেষ হতেই আমাদের ডান পাশের দেয়ালটা বিলীন হয়ে ধোঁয়াশায় ভরে গেলো। আর সেই ধোঁয়াশার মাঝ থেকে বেরিয়ে এসে প্রথমে আসন নিলেন এলিয়ন প্রিমিয়ার এবং তার ডানের ও বামের আসনে বসলেন দু’জন সার্জেন্ট-অ্যাট-আর্মস এলিয়ন। তাদের পোশাক একটু আলাদা ধাঁচের। তাছাড়া দু’জনের চোখ থেকেই নীল রঙের আলো ঠিকরে বেরোচ্ছে। ধোঁয়াশা মিলিয়ে যেতেই পেছনের দেয়ালটা আগের অবস্থায় ফিরে এলো। অমনি মহামান্য প্রিমিয়ার দাঁড়িয়ে আমাকে হাসিমুখে অভ্যর্থনা জানালেন। এবার আমি আর না দাঁড়িয়ে পারলাম না। আমরা পরস্পর সালাম বিনিময়ের পর নিজ নিজ আসনে বসে গেলাম।
এরপরই সবাই নিথর-নিশ্চুপ। মহামান্য প্রিমিয়ার টেবিলে রাখা একটা প্লাটিনামের তৈরি ঘণ্টায় ক্রিস্টাল কাচের হাতুড়ি দিয়ে মৃদু আঘাত করে বললেন- অর্ডার, অর্ডার।
অমনি একজন সার্জেন্ট-অ্যাট-আর্মস দাঁড়িয়ে বললেন- মহামান্য আদালতের অনুমতিক্রমে আসামিদের নিম্নকক্ষ আদালতের দ্রুত বিচারিক বিবেচনার অধীনে মঙ্গলমান কোড থ্রিথার্টিটু আদেশের আলোকে তাদের জবানবন্দি রেকর্ড করা হয়েছে। আমরা তা এখন মহামান্য আদালতে পেশ করছি।
এই বলে তিনি তার বাম কানের চার মিলিমিটার নিচে সেট করা একটা বাটনে চাপ দিলেন। সাথে সাথে তার মাথার খুলির একটা অংশ ল্যাপটবের মতো খুলে গেলো। আর সেখান থেকে নীলাভ আলোর রশ্মি ছড়িয়ে ষাট ইঞ্চি বাই পঞ্চাশ ইঞ্চি মাপের একটা লেসার স্ক্রিনের সৃষ্টি হলো। তারপর দু’বার বিপ বিপ শব্দ হতেই পুরো স্ক্রিন জুড়ে ফুটে উঠলো হাই রেজুলেশনের পরিষ্কার মুভি। তাতে দেখা যাচ্ছে, মিস্টার হ্যারিসন পটারকে ঘিরে আছে কয়েকটি বানর। একটি বানর তার ডান কান ধরে টানছে, আরেকটি বানর তার মাথার চুলে বিলি কেটে উঁকুনের সন্ধান করছে। অপর একটি বানর মাঝে মাঝে তার লেজের আগা দিয়ে হ্যারিসনের নাকে সুড়সুড়ি দিয়ে মজা করছে। আরেকটি বানর ঠিক পেছনের কাপড় ধরে টানাটানি শুরু করেছে। মনে হচ্ছে, বানরটা যেন মিস্টার হ্যারিসনের লেজ খুঁজে বেড়াচ্ছে।
এসব দেখে আমার খুব হাসি পেলেও নিজেকে জোর করে গম্ভীর বানিয়ে রাখলাম। দেখলাম, বানরদের বাঁদরামিতে একপর্যায়ে মিস্টার হ্যারিসন অসহায়ের মতো বলছেন, প্লিজ এদের থামান। আমি আমার সব অপরাধ খুলে বলছি।
সাথে সাথে তার কাছ থেকে বানরগুলো উঠে চলে গেলো। তিনি বলতে লাগলেন- আসলে বিশ্বাসীদের দুনিয়ায় আমরা তাদের ওপর প্রভাব বিস্তার করতেই আমাদের ভাবগুরু ডারউইনের ভুয়া থিওরিকে রদ্দা পচা এবং স্রেফ মিথ্যাচার জেনেও তা প্রচার-প্রসারে নানাবিধ কৌশল চালিয়ে যাচ্ছি। তবে সত্যি কথাটা হলো, শত বছরের নানাবিধ উচ্চতর বৈজ্ঞানিক গবেষণা করে দেখা গেছে- বানর থেকে কখনোই মানবজাতির সৃষ্টি হয়নি। গবেষণার মাধ্যমে আমরা এটাই জানি যে, মহান সৃষ্টিকর্তা আসলে আদি মানব আদম থেকেই গোটা মানব জাতির সৃষ্টি করেছেন। আর এই ধ্রুব সত্যটাও জেনেছি বিশ্বাসী মুসলিমদের মহাগ্রন্থ কুরআন রিসার্চ করে।
কারণ, জ্ঞান-বিজ্ঞানের বিশাল ভান্ডার আল কুরআন হাতে পেয়েও ওসব বিশ্বাসীরা তার তেমন কদর করছে না। সেই সুযোগটা কাজে লাগিয়ে আমরা রিসার্চের প্রধান অবলম্বন হিসেবে বেছে নিয়েছি কুরআনকে। ফলে মহাজাগতিক অনেক রহস্যই আমরা জেনে ফেলছি এবং নিত্য নতুন আবিষ্কারের সূত্রও সেখান থেকে পাচ্ছি। কিন্তু প্রকাশ্যে কুরআনকে আমরা স্বীকার না করে তার উল্টো শিক্ষাকে অপপ্রচার করেই লোক ঠকানোর কাজটা চালিয়ে যাচ্ছি। আমাদের এসব প্রচার-প্রপাগান্ডার পেছনে আছে খোদ ইসরাইল এবং দুনিয়ার তাবৎ সাম্রাজ্যবাদী শক্তি। ওরাই আমাদের এসব ঘৃণ্য ও অমানবিক মতবাদের প্রসারের জন্য কোটি কোটি ডলার সাহায্য দিচ্ছে। তবে এখন আমি আপনাদের হাতে বন্দি। তাই এসব কথা সজ্ঞানে ও অকপটে স্বীকার করতে কোনো আপত্তি নেই। কারণ, পৃথিবীর বিশ্বাসী মানুষতো আর আমার এই স্বীকারোক্তির কথা জানতে পারছে না।
মনে হলো তার কথা শেষ। অমনি ব্যাস সিন আউট হয়ে গেলো মিস্টার হ্যারিসন পটার। আবার দুটো বিপ বিপ আওয়াজ। সাথে সাথে দেখা গেলো মিস্টার রাফায়েল বার্তেকে। তাকে দেখা গেলো বেশ কয়েকটি কুকুরের সাথে। কুকুরগুলো বেশ আয়েশ করে তার নাকে মুখে ইয়ে করে আর আলতো খামচাখামচির তোড়ে তাকে অতিষ্ঠ করে তুলেছে। তিনিও বাধ্য হয়ে ‘যাহা বলিবো সত্যি বলিবো, সত্যি বই মিথ্যা বলিবো না’ বলে আকুতি জানানোর পর বেশ শান্তশিষ্ট ভদ্রলোকের মতো কুকুরগুলো তার কাছ থেকে চলে গেলো। তিনিও বলতে শুরু করলেন- মিস্টার হ্যারিসন পটার আপনাদের কাছে কী জবানবন্দি দিয়েছেন জানি না। তবে আমি সজ্ঞানে, অকপটে সব সত্যকেই জবানবন্দি হিসেবে তুলে ধরবো। আসলে আমি তো নিজেই ইহুদির সন্তান। আমাদের সম্প্রদায়গত একটা এমবিশান হলো- মানব সৃষ্টির ইতিহাসকে বিকৃত করতে পৃথিবীতে মানুষের আগমনের সময়টাকেও বিতর্কিত করে ফেলা। যাতে সাধারণ মানুষের দৃষ্টি এতোটা দূর অতীতের দিকে ঘুরিয়ে দেয়া যায় যে, তারা কুরআনের মতে আদম সৃষ্টির ইতিহাসকেও অবিশ্বাস করতে থাকে। সে দিকটাকে স্মরণে রেখে আমরা রিসার্চের নাম করে যুগে পৃথিবীতে মানুষের আগমনের কালটাকে কোটি কোটি বছর পিছিয়ে নিতে নতুন নতুন ও একবারে তরতাজা ভুয়া তথ্য তুলে ধরার কাজ চালিয়ে যাচ্ছি।
প্রকৃতপক্ষে আদমের পৃথিবীতে আগমনের সময় থেকেই দুনিয়াতে মানুষের বসবাস শুরু হয়েছে। আমরা আদমের দুনিয়াতে অবস্থান, তার পরবর্তী নবী-রাসূলদের দুনিয়াতে অবস্থান এবং মুসলমানদের শেষ নবীর দুনিয়াতে অবস্থানের পবরবর্তী সময়কাল নিয়ে গবেষণা করে আমরা এ কথা প্রমাণ করতে পেরেছি যে, চলমান শতাব্দী পর্যন্ত দুনিয়াতে মানুষের বসবাসের বয়স মাত্র সাড়ে দশ হাজার বছর বা তার চেয়ে সামান্য বেশি। কিন্তু কোনোভাবেই তা কোটি কোটি বছর নয়। আসলে আদি মানব আদম থেকেই গোটা মানব জাতির সৃষ্টি করেছেন। আর এই ধ্রুব সত্যটাকে আমরা আবিষ্কার করতে পেরেছি বিশ্বাসী মুসলিমদের মহাগ্রন্থ কুরআন রিসার্চ করে। কিন্তু প্রকাশ্যে কুরআনকে আমরা স্বীকার না করে তার উল্টো শিক্ষাকে অপপ্রচার করেই লোক ঠকানোর কাজটা চালিয়ে যাচ্ছি। স্বাভাবিকভাবেই এখানে ইসরাইল সরাসরি ভূমিকা রাখছে। এ ব্যাপারে যাবতীয় লজিস্টিক সাপোর্ট ইসরাইল সরকারই দিচ্ছে। সেটা সরাসরিভাবে হোক আর অন্যান্য অবিশ্বাসবাদীদের মাধ্যমেই হোক। আর এর সাথে সব সময়ই সাম্রাজ্যবাদীরা সহযোগিতা দিয়ে যাচ্ছে। কারণ তাদের সামরিক ও বেসামরিক সকল ব্যবসা-বাণিজ্যে ইসরাইল হচ্ছে সবচাইতে নির্ভরযোগ্য অংশীদার। তবে এখন আমি আপনাদের হাতে বন্দি। তাই এসব কথা সজ্ঞানে ও অকপটে স্বীকার করতে কোনো আপত্তি নেই। কারণ, পৃথিবীর বিশ্বাসী মানুষতো আর আমার এই স্বীকারোক্তির কথা জানতে পারছে না।
ব্যাস সার্জেন্ট-অ্যাট-আর্মস এলিয়নের লেসার স্ক্রিন থেকে তিনিও আউট হয়ে গেলেন। সাথে সাথে বাটন টিপে এলিয়ন নিখুঁত আকৃতিতে ফিরে এলেন। এখন আর বুঝার উপাই রইলো না যে, একটু আগেও তার মাথার একটা অংশ থেকে এতোসব অবাক করা ঘটনা ঘটে গেলো। আমার বিস্ময় বেড়েই চলেছে। ভাবছি এরপর আবার কী কী ঘটতে পারে।
এমনি সময় মোমেন্টিয়ার এলিয়ন সামনের টেবিলে রাখা কনফারেন্স মাইক্রো ফোনের বাটন টিপে তার চূড়ান্ত আর্গুমেন্ট দিতে শুরু করলেন। তিনি বললেন- মহামান্য আদালত! বিগত দেড় হাজার বছর পর্যবেক্ষণ ও অনুসন্ধানের পর আপনার বরাবরে আমরা দুনিয়ার বিভ্রান্তিবিলাসীদের যে সুচিন্তিত রিপোর্ট পেশ করেছি তারই আলোকে আজ দুনিয়া থেকে তুলে এনে অবিশ্বাসীদের চলমান সময়ের দু’জন মুখ্য অপরাধীকে হাজির করা হয়েছে। আজকের আদালত তাদের এই জবানবন্দিকেই তাদের জন্য সর্বোচ্চ সাজা বিবেচনা করে তাদেরকে দুনিয়াতে ফিরিয়ে দেবার আদেশ প্রার্থনা করছে। যাতে তাদের বক্তব্য থেকেই দুনিয়ার বিশ্বাসী আর অবিশ্বাসী সব সম্প্রদায়ের সামনেই মানবতার চিরশত্রু এই ঘৃণ্যচক্রের মুখোশটা খুলে যায় এবং দুনিয়ার মানুষ তাদের সত্যিকারের পরিচয় ও দুনিয়াতে তাদের বসবাসের প্রকৃত সময়কালটা জানতে পেরে ধন্য হয়। আপনার আদিষ্ট বিষয়ে আজকে আমাদের আর কোন বক্তব্য নেই মহামান্য আদালত, সর্বোচ্চ ইনসাফ প্রতিষ্ঠিত হোক এটাই আমাদের কাম্য।
ব্যাস এইটুকু বলে মোমেন্টিয়ার বসে গেলেন।
পাঁচ. এবার মহামান্য প্রিমিয়ার কী রায় দেবেন সে ভাবনায় আমার তো তখন বুকের ভেতরে হৃদপিন্ডটা টেনিস বলের মতো লাফাতে শুরু করেছে। দম বন্ধ করে রায়ের অপেক্ষা করছি। মহামান্য প্রিমিয়ার গম্ভীরভাবে অর্ডার অর্ডার উচ্চারণ করে আমাদের সতর্ক করলেন। তারপর ধীরে সুস্থে আসামিদ্বয়ের দিকে চুম্বকীয় দৃষ্টি ছুড়ে দিয়ে বললেন- আদালতে উপস্থাপিত চূড়ান্ত জবানবন্দি সম্পর্কে আসামিদ্বয়ের কোনো দ্বিমত আছে কি?
সাথে সাথে প্রিমিয়ারের বাম পাশের সার্জেন্ট-অ্যাট-আর্মস দাঁড়িয়ে বললেন- মহামান্য আদালতের কাছে আসামি পক্ষের বিশেষ কোনো আর্জি নেই।
মহামান্য এলিয়ন প্রিমিয়ার এবার রায় পাঠ করতে শুরু করলেন। তিনি তার রায়ে বললেন- সকল তথ্য প্রমাণ ও বাদিপক্ষের উপস্থাপিত আরজি বিবেচনায় এনে মহামান্য আদালত এই মর্মে আদেশ প্রদান করছে যে, মানবজাতির জন্য অবমাননাকর যেসব বিভ্রান্তিমূলক থিওরি প্রচার এবং প্রকৃত সত্য গোপনের মাধ্যমে বিশ্বাসীদের সাথে ডারউইন থেকে শুরু করে আজ পর্যন্ত যারা ধারাবাহিক প্রতারণা করে আসছেন, চলমান সময়ে উপস্থিত আসামিদ্বয় সেই অপরাধী চক্রের নেতা। তাই মহামান্য সুপ্রিম এলিয়ন আদালতে রেকর্ডকৃত তাদের প্রদত্ত জবানবন্দি তাদেরই উপস্থিতিতে দুনিয়াবাসীর জানা খুবই জরুরি। এতে আসামিদ্বয়ের যে মনস্তাত্ত্বিক শাস্তি হবে আজকের আদালত সে শাস্তির আদেশই প্রদান করলো। অত্র সাজা কার্যকর করার নিমিত্তে আসামিদ্বয়কে পৃথিবীতে নিয়ে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য আমাদের পরমবন্ধু মিস্টার এসএমএম আকবরজিকে আনুষ্ঠানিকভাবে অনুরোধ জানানো হলো। এ জন্য তার হাতে মিস্টার হ্যারিসন পটার ও মিস্টার রাফায়েল বর্তেকে সোপর্দ করা হলো। এই আদেশ আগামী এক শ’ মঙ্গলমান ঘণ্টার মধ্যে পরিপালিত হবে।
মহামান্য আদালতের রায় শুনে আমি খানিকটা ভড়কে গেলাম। এই ঘৃণ্য পিশাচ তুল্য হ্যারিসন পটার ও রাফায়েল বর্তেকে আমি কেমন করে দুনিয়াতে ফিরিয়ে নিয়ে সামাল দেবো! তাহলে তো দুনিয়ার সব জায়েনিস্ট আর সাম্রাজ্যবাদীরা একজোটে আমাকে রুখে দাঁড়াবে!! না, না। এটা আমার জন্য খুবই ঝুঁকিপূর্ণ। মুহূর্ত কয়েক ভেবে অপারগতা প্রকাশ করে দাঁড়িয়ে বললাম- মহামান্য প্রিমিয়ার! এটা আমার পক্ষে সম্ভব হবে না।
অমনি মাথায় একটা কিসের আঘাত লাগলো। মাথা ঝাড়া দিয়ে তাকিয়ে দেখি মাইক্রবাসের ছাদের সাথে মাথা ঠুকে আসলে আঘাতটা লেগেছে। সাথে সাথে পাশের আসনে বসা আমার প্রিয় ছোট শ্যালক আবু নাঈম মুচকি হেসে বললো- ওহে দুলাভাই, আমরা তো চলন নিয়ে বিয়ে বাড়িতে পৌঁছে গেছি। আর আপনি বলছেন ‘সম্ভব হবে না’। কেন সম্ভব হবে না। আমরা যখন এসেই গেছি- তো বড় ভাইয়ার জন্য নতুন ভাবীকে নিয়ে রাত্র নামার আগেই আমাদের বাড়িতে ফিরে যাওয়া সম্ভব হবে। তা আপনার মাথায় তেমন ঠোক্কর লাগেনি তো?
ছোট শ্যালকের খোঁচা মারা কথাটুকু শুনে মাথাটা আরেকবার ঝাড়া দিয়ে বুঝতে পারলাম, বড় শ্যালক আবু নাসেরের বিয়ের চলনে আসতে গিয়ে মাইক্রোবাসের এসির আরামে মনে হয় খানিকটা তন্দ্রা এসে গিয়েছিলো। এরই মাঝে এলিয়েন ম্যাগাপ্রভিন্স বেরিয়ে এলাম! হায় সেলুকাস!! 

করআনের আলো

কুরআনের আলো




নদীর কিনার ঘেঁষে বেড়ে ওঠা কাশফুলগুলো যেন পবিত্রতার প্রতীক হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। ওরা ভাবল, তাদের এবারের আসরটা এখানেই করা যায়। একপাশে নদী, অন্য দিকে কাশফুলের শীতল ছোঁয়া। এ পরিবেশে আড্ডাটা ভালোই জমবে। ঠিক আড্ডা তো নয়, তাদের ইসলামী জ্ঞানচর্চার নিয়মিত বৈঠক।
ওরা চার বন্ধু। আমীন, শাহী, হাসিব ও রাফীক। প্রতি সপ্তাহেই তারা একত্র হয় নির্দিষ্ট কোনো স্থানে। কুরআন-হাদিস অথবা অন্য কোনো ইসলামী বই থেকে সেখানে আলোচনা হয়। হয় সমসাময়িক বিষয় নিয়ে মতবিনিময়ও। ফলে তাদের চিন্তার জগৎটাও দিন দিন বিস্তৃত হচ্ছে বৈ কী!
সময়মতো সবাই উপস্থিত হলো কাশবনে। আলোচনা হলো ‘আল-আসমাউল হুসনা’ প্রসঙ্গে। বৈঠক শেষে রাফীকের বইটি বাসায় নিয়ে গেল হাসিব। বাসায় ফিরেই পড়া শুরু। চমৎকার একটি বই। কুরআন-হাদিসের আলোকে বিষয়ভিত্তিক প্রবন্ধ সঙ্কলন। বইটি হাসিবের এতই ভালো লেগেছে যে, সে সিদ্ধান্ত নিলো এটা আর ফেরতই দেবে না।
হাসিব কোথায় যেন একটা লেখা পড়েছিল। লেখার শিরোনাম ‘এই চোর সেই চোর নয়’। সেখান থেকে সে জেনেছে, বই চুরি করা কোনো খারাপ বিষয় নয়। বইচোর আর সাধারণ চোর এক নয়। বইয়ে তো জ্ঞান থাকে, আর জ্ঞান কখনো চুরি হয় না। তা ছাড়া অনেক বিখ্যাত লোকও বই চুরি করতেন। চুরি মানে মালিককে না বলেই নিয়ে যেতেন আর কি! বিশেষ করে শীতকালে গায়ে চাদর জড়িয়ে লাইব্রেরিতে গিয়ে বই চুরির সুবিধাটা গ্রহণ করতেন তারা। তা না হলে গাঁটের পয়সা খরচ করে ক’টা বই-ই বা কেনা সম্ভব? হাসিব ভাবল, আমি তো আর চুরি করিনি। বলেই এনেছি। সুতরাং আমি ফেরত না দিলে তো সমস্যা হওয়ার কথাই না।
বইটি পড়তে পড়তে এক জায়গায় হাসিবের চোখ আটকে গেল। আল কুরআনের একটি আয়াত, যেখানে বলা হয়েছে, “নিশ্চয়ই আল্লাহ তোমাদেরকে নির্দেশ দিচ্ছেন যে, তোমরা যেন আমানতসমূহ তার প্রাপকদের নিকট পৌঁছিয়ে দাও।” (সূরা নিসা : ৫৮) এর ব্যাখ্যায় হাদিসের উদ্ধৃতি দিয়ে বলা হয়েছে, আমানতের খিয়ানত করা মুনাফিকের লক্ষণ।
এর পর থেকে হাসিবের মাথায় একটি প্রচন্ড যন্ত্রণা শুরু হলো। এ যন্ত্রণার কথা কাউকে বলার মতো নয়। বোঝানোও সম্ভব নয় কাউকে। হাসিব বুঝতে পারল, বইটি তার কাছে আমানত। সুতরাং তা তার মালিককে ফেরত দিতেই হবে। আর বই চুরির ধারণাটাও তার কাছে ভুল মনে হলো। সব চুরি-ই তো চুরি। তা বই হোক কিংবা অন্য কিছু।

হাদিসের আলো

হাদিসের আলো



বেশ ক’দিন ধরে ক্লাসে অনুপস্থিত সা’দ। কিন্তু কেন? এ নিয়ে তার সহপাঠীদের কারোই কোনো মাথাব্যথা নেই। বরং সবাই একধরনের খুশিই বলা চলে। তবে প্রতিদিনের আড্ডা-আলোচনায় তার প্রসঙ্গ থাকছেই। সা’দের অনুপস্থিতির বিষয়টাকে সবাই কেমন উপভোগ করছে। টিপ্পনী কেটে কেউ কেউ বলছে, সা’দ কি মঙ্গলগ্রহে পাড়ি জমাল না কি! তাহলে তো বেচারা মঙ্গলের কপালেও অমঙ্গল আছে!
সা’দ মূলত ডানপিটে স্বভাবের ছেলে। কারো সাথেই সে মিশতে পারে না। ক্লাসে তার একজন বন্ধুও নেই। থাকবে কী করে! কথায় কথায় সে দ্বন্দ্বে জড়িয়ে পড়ে। সেদিনও সে তার সহপাঠী রাহীর নাক ফাটিয়ে দিয়েছিল। তার ভাবখানা এমন যে, ঝগড়া-ঝাঁটি, মারামারি করলেই বীর আখ্যা পাওয়া যাবে। সবাই তাকে ভয় করবে ইত্যাদি ইত্যাদি। অথচ সে যে দিন দিন সবার ঘৃণার পাত্র হচ্ছে- এ কথাটা সে বুঝতে পারছে না।
একদিন শ্রেণিশিক্ষক ক্লাসে সা’দের প্রসঙ্গ তুললেন। বললেন, সা’দ অসুস্থ। ডেঙ্গু জ্বর হয়েছে তার। স্যারের কথা শুনে সবাই হো হো করে হেসে উঠল। একজন তো বলেই ফেলল, ‘মহাবীর আলেক্সান্ডার কি তাহলে মশার কাছেই কুপোকাত?’ স্যারের এক ধমকে চুপসে গেল সবাই। স্যার এবার ক্লাসের সকল ছাত্রকে প্রস্তাব দিলেন তাকে দেখতে যাবার। কিন্তু কারো মুখে কোনো রা শব্দ নেই। এ যেন অসীম নীরবতা!
শ্রেণিশিক্ষক বিষয়টি বুঝতে পারলেন। বললেন, শোনো! আমাদের প্রিয়নবী সা:-এর চলার পথে প্রতিদিন এক দুষ্টবুড়ি কাঁটা বিছিয়ে রাখত। একদিন পথে কাঁটা না দেখে তিনি সরাসরি বুড়ির বাড়ি চলে গেলেন। বুড়িকে অসুস্থ অবস্থায় পেয়ে তিনি তার সেবা-যত্ন শুরু করে দিলেন। এ দৃশ্য দেখে বুড়ি তার কৃতকর্মের জন্য অনুতপ্ত হয়ে ইসলামই গ্রহণ করে বসল। হতে পারে সা’দও তার বিপদের মুহূর্তে তোমাদের কাছে পেয়ে তার ভুল বুঝতে পারবে।
স্যার আরও বললেন, অসুস্থ ব্যক্তিকে দেখতে যাওয়া ও তার সেবা-শুশ্রুষার ব্যাপারে হাদিসে অনেক উৎসাহ প্রদান করা হয়েছে। যেমন, “সাহাবী সাওবান রা: থেকে বর্ণিত। রাসূল সা: বলেছেন, এক মুসলিম যখন অপর মুসলিম ভাইয়ের সেবা-যত্ন করে, তখন সে মূলত জান্নাতের ফলফলারি আহরণে লিপ্ত থাকে। এমনকি সেখান থেকে ফিরে আসা পর্যন্ত।” (মুসলিম)
শ্রেণিশিক্ষকের আবেগঝরা কথায় অনুপ্রাণিত হয়ে সবাই এসে হাজির হলো সা’দদের বাড়িতে। সা’দ যেন বিশ্বাসই করতে পারছে না। এক এক করে সবাইকে বুকে জড়িয়ে ধরল সে। আর ততক্ষণে তার চোখ দুটো যেন অশ্রুনদী হয়ে গেছে

সমুদ্র বিজ্ঞান

সমুদ্র বিজ্ঞান 


সূরা নূরের ৩০ ও ৪০ নং আয়াতে বলা হয়েছে:
"যারা কাফের তাদের কাজ মরুভুমির মরীচিকার মত, যাকে পিপাসার্ত ব্যাক্তি পানি মনে করে। এমনকি সে যখন তার কাছে যায়, তখন কিছুই পায় না এবং পায় সেখানে আল্লাহকে, এরপর আল্লাহ তার হিসাব চুকিয়ে দেন। 
আল্লাহ দ্রুত হিসাব নেন। অথবা (তাদের কাজ) প্রমত্ত সমুদ্রের বুকে গভীর অন্ধকারের মত, যাকে উদ্বেলিত করে তরঙ্গের পর তরঙ্গ, যার উপরে ঘন কালো মেঘ আছে। একের উপর এক অন্ধকার। যখন সে তার হাত বের করে, তখন তাকে একেবারেই দেখতে পায় না। আল্লাহ জ্যোতি দেন না, তার কোন জ্যোতিই নেই"
সমুদ্র বিজ্ঞান অনুযায়ী সূর্যের আলোর তিন থেকে ত্রিশ ভাগ সাগরে প্রতিফলিত হয়।
তাই ২০০ মিটার গভীর সাগরে নীল রং ছাড়া আলোর সব রংই মিশে যায়। আগেকার দিনে মানুষ যন্ত্র না থাকায় ২০-২৫ মিটারের নীচে নামতে পারতো না। সাবমেরিনসহ নানা উন্নত সাজ সরাঞ্জাম ব্যবহার করে বিজ্ঞানীরা জেনেছেনে গভীর সাগরের পানির ঘনত্ব বেশি হওয়ায় দুই ধরনের ঢেউ সৃষ্টি হয়।
উপরের ঢেউ ও ভিতরের ঢেউ।
নিচের ঢেউ অন্ধকার হওয়ায় দেখা যায় না। ফলে কেউ হাত বের করলেও সেই হাত দেখতে পারবে না ।