শনিবার, ১০ অক্টোবর, ২০১৫

বিখ্যাত মানুষের বোকামি

বিখ্যাত মানুষের বোকামি

তারা সবাই বড় মানুষ, বিখ্যাত মানুষ। দুনিয়াজোড়া তাদের সুনাম। তুমি হয়তো ভাবছ এমন মানুষ আবার বোকা হয় কী করে? বোকা তো আমাদের পল্টু। ও সকালবেলা ঘুম থেকে উঠে দাঁত ব্রাশ করার সময় পেস্ট খেয়ে বলে- দারুণ মজা!


আসলে ছোট তো তাই পল্টু না বুঝে এমন করে। কিন্তু আইনস্টাইন, সত্যজিৎ, শরৎচন্দ্র এরা তো ছোট নন। তাহলে তারা বোকা হবে কেন? আসলে জীবনে চলার পথে অনেক বুদ্ধিমান মানুষও অনেক সময় বোকার মতো কাজ করে ফেলেন। এতে অবাক হবার কিছু নেই। আবার এমনও ধরে নেয়া যায়, সে হয়তো তার বিবেচনায় সেরা কাজটিই করেছেন, কিন্তু আমি, তুমি ধরে নিচ্ছি, তিনি বোকার মতো কাজ করেছেন। এটা পরিস্থিতির ওপর অনেকটা নির্ভর করে। আর কেউ বোকার মতো কাজ করলেই যে ‘হাবাগোবা’ হয়ে যায় তা কিন্তু নয়।

ভালো কথা, আইনস্টাইন, সত্যজিৎ, শরৎচন্দ্র- এদের সবাইকে চেন তো? আইনস্টাইন বড় বিজ্ঞানী। সত্যজিৎ রায় চলচ্চিত্র নির্মাতা। ‘পথের পাঁচালী’ তিনিই তৈরি করেছিলেন। তোমরা এই সিনেমাটি না দেখলে অবশ্যই দেখে নেবে। শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় সাহিত্যিক। তোমাদের জন্য অনেক গল্প লিখেছেন। না পড়লে পড়ে নিও। তারপর ধরো স্যার আইজাক নিউটন। তিনিও বড় বিজ্ঞানী। অথচ তিনি কেমন বোকার মতো কাণ্ড করেছেন দেখ।

নিউটনের গবেষণাগারের দরজার ভাঙা অংশ দিয়ে একটি বিড়াল যাতায়াত করত। একদিন নিউটন লক্ষ করলেন বিড়ালটির বাচ্চা হয়েছে। ফুটফুটে বিড়াল ছানাটিকে নিউটনের বেশ ভালো লাগল। বাচ্চাটি যাতে অনায়াসে গবেষণাগারে যাতায়াত করতে পারে এ জন্য তিনি মা বিড়াল দরজার যে ভাঙা অংশ দিয়ে ঘরে ঢুকত তার পাশে কেটে ছোট্ট আরেকটি দরজা করে দিলেন। বড় ফুটো দিয়ে মা বিড়ালের সঙ্গে ছানাটিও যে ঢুকতে পারবে এ বিষয়টি নিউটনের মাথাতেই আসেনি। তিনি দুইজনের জন্য দুটো দরজা করে দিলেন।

এবার আইনস্টাইনের গল্পটি বলি। একবার এক সহকর্মী তাঁর কাছে টেলিফোন নাম্বার চাইলেন। আইনস্টাইন তখন টেলিফোন গাইডে নিজের ফোন নাম্বার খুঁজতে শুরু করলেন। এদিকে সময় নষ্ট হচ্ছে দেখে সহকর্মী বিরক্ত হয়ে বললেন, তুমি টেলিফোন নাম্বারটাও মনে রাখতে পার না?
এ কথা শুনে আইনস্টাইন বললেন, বোকার মতো কথা বলো না, যে জিনিস টেলিফোন গাইডে লেখা আছে, সেটা আমি মুখস্থ করতে যাব কেন?

কথা কিন্তু একদিক দিয়ে আইনস্টাইন ভুল বলেননি। তাই বলে তোমরা তোমাদের বাড়ির নাম্বার, বাবা-মা’র ফোন নাম্বার ভুলে যেও না। বিপদে দেখবে ওটাই কাজে দেবে। এবার সত্যজিৎ রায়ের ঘটনাটা বলি।  ‘কাঞ্চনজঙ্ঘা’ সিনেমা তৈরির সময় তিনি একটি দৃশ্যের জন্য পাখি খুঁজছিলেন। এমন সময় এক বয়স্ক ব্যক্তি এসে জিজ্ঞেস করলেন, কী খুঁজছেন?
: হিমালয়ান বার্ড।
: হিমালয়ান বার্ড বলে তো কিছু নেই!
আগন্তুকের মুখে এ কথা শুনে সত্যজিৎ রায় খুব বিরক্ত হলেন। সহকারীকে ইশারায় বললেন, লোকটিকে সড়িয়ে নিতে।
সহকারী ঠেলেঠুলে লোকটিকে সড়িয়ে দিয়ে এসে যা বললেন তাতে নিজের বোকামির জন্য সত্যজিৎ রায় খুবই বিব্রত হলেন। কারণ ওই ব্যক্তি আর কেউ নন, পাখি বিশেষজ্ঞ সলিম আলি।

যিনি পাখি নিয়ে গবেষণা করে বিখ্যাত হয়েছেন তাকেই কিনা পাত্তা দিলেন না সত্যজিৎ রায়। এটা বোকামি নয়? এমন বোকামি শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ও করেছেন। একবার তিনি থিয়েটারে নাটক দেখতে এসেছেন। নাটক শেষে আবিষ্কার করলেন তাঁর একপাটি জুতা নেই। তিনি মনে মনে ভাবলেন, চোর ব্যাটা ভেবেছে আমি এ পাটিটাও থুয়ে যাব, আর সে পড়ে এসে নিয়ে যাবে। তা হবে না। শরৎচন্দ্র ওই একপাটি জুতা বাসায় ফেরার সময় গঙ্গায় ছুড়ে ফেলে দিয়ে আসলেন। কিন্তু পরদিন সকালে হল ঝাড়ু দেওয়ার সময় একপাটি জুতা পাওয়া গেল। হলের মালিক জুতা শরৎচন্দ্রের কাছে পৌঁছে দিলেন। সেই একপাটি জুতা ফিরে পেয়ে নিজের বোকামির জন্য শরৎচন্দ্র বেজায় আক্ষেপ করতে লাগলেন।

তারপর ধরো এ কে ফজলুল হকের কথা বলি। তিনি বিখ্যাত রাজনীতিক। সমাজের উন্নতি কিসে হবে, কীভাবে মানুষ উপকৃত হবে এই ছিল তার রাজনৈতিক আদর্শ। তার কাছে যে সমস্যা নিয়ে যেত তিনি সমাধান করার ব্যবস্থা করতেন। তিনি তদবিরকারীর সামনেই টেলিফোনে ব্যবস্থার নির্দেশ দিতেন। একদিন এক তদবিরকারীর সামনেই ফোনে নির্দেশ দিলেন সমস্যার সমাধান করে দেয়ার জন্য। এমন সময় আরেকজন ঘরে ঢুকতেই ফজলুল হক খানিকটা বিরক্ত কণ্ঠে বললেন, তোমার আবার কী সমস্যা?
স্যার আমি টেলিফোন অফিস থেকে আসছি। আগন্তুক বলল, আপনার লাইনটা গতকাল থেকে কাটা। ওটা ঠিক করতে এসেছি। এবার বোঝো কাণ্ড!

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন