আমাদের পৃথিবী
শুভেচ্ছা বন্ধুরা!
বিজ্ঞানযাত্রাকে ধন্যবাদ আমাকে এত সুন্দর একটা প্ল্যাটফর্ম তৈরি করে দেয়ার জন্য, যেখানে আমার বিজ্ঞান বিষয়ক অর্জিত শিক্ষা এবং চিন্তাধারাকে আমি লেখা আকারে প্রকাশ করতে পারব। এজন্য বেশ গর্ব অনুভূত হচ্ছে।
আমার নাম সজল জাহান। আমি একজন ফ্রিল্যান্সার। ফ্রিল্যান্সার হলেও বিজ্ঞান আর প্রযুক্তি নিয়ে আমার আগ্রহের শেষ নেই। খুব ছোটবেলা থেকেই আমি বিজ্ঞানের উপর একটা আকর্ষণ অনুভব করি। অফিসিয়াল কোনো কাজ না থাকলেই আমি বিজ্ঞান বিষয়ক পড়ালেখায় ডুবে যাই, বিভিন্ন উৎস ঘাঁটতে থাকি। বিজ্ঞানযাত্রায় “আমাদের পৃথিবী” নামক ধারাবাহিক একটি পোস্ট করার ইচ্ছে আমার রয়েছে। সেই সূত্রেই এটা আমার প্রথম পোস্ট।
আমরা জানি পৃথিবীই একমাত্র গ্রহ যেখানে প্রাণের অস্তিত্ব রয়েছে। কিন্তু কোন কোন বিষয়গুলো আমাদের গ্রহকে অন্যান্য গ্রহ থেকে ভিন্ন ভাবে তৈরি করেছে, যার জন্য এই পৃথিবীতে প্রাণের উৎসব চলছে? এই প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে হলে আমাদের বর্তমান সময় থেকে অনেক অনেক পিছিয়ে যেতে হবে। জানতে হবে কবে থেকে মানব সভ্যতার শুরু হয়েছিলো, কতবার এবং কীভাবে পৃথিবীর প্রত্যেকটি মহাদেশ পরস্পরের সাথে ধাক্কা খেয়েছিলো। সম্মুখীন হতে হবে বিশাল আকৃতির ডায়নোসোরের, বুঝতে হবে সমুদ্রের সৃষ্টি কীভাবে হলো। কেননা প্রথম প্রাণের অস্তিত্ব খোঁজার জন্য আমাদেরকে সমুদ্রের গভীরেই যেতে হবে। অনুভব করতে হবে গ্লোবাল আইস এইজ-এর সময়কাল, অভিজ্ঞতা নিতে হবে কসমিক মেটেওরাইট অ্যাটাকের।
এই পৃথিবীর অতীতে ভ্রমণ করার পর আমরা এই পৃথিবীর অবিশ্বাস্য ঘটনাসমূহ জানতে পারব। সাথে এটাও আবিষ্কার করতে পারব যে, আমরা সবাই এখানে আছি কীভাবে এবং কেন!
আমার ধারাবাহিক পোস্টগুলোতে যদি কেউ কোনো প্রকার ভুল পেয়ে থাকেন, প্লিজ আমাকে সংশোধন করে দিবেন।
চলুন আমাদের যাত্রা ৫ বিলিয়ন বছর আগে থেকে শুরু করি।
ঠিক ৫ বিলিয়ন বছর আগে পৃথিবী স্বয়ংসম্পূর্ণ ভাবে গঠিত হতে পারেনি। সূর্য এবং নতুন জন্মগ্রহণকারী তারাগুলো ধূলো দিয়ে ঘেরা ছিলো। সময়ের আবর্তনের ফলে গ্র্যাভিটি ধূলোগুলিকে আকর্ষণ করে ছোট ছোট পাথর হিসেবে তৈরি করলো। প্রায় মিলিয়ন বছর ধরে গ্র্যাভিটি এই পাথর এবং ধূলোকে আকর্ষণ করতে থাকে। আকর্ষণে আটকে যাওয়া বস্তুগুলোর প্রচণ্ড ঘূর্ণনের ফলে পৃথিবীর গোল-আকৃতি সৃষ্টি হয়।
তখন পৃথিবীসহ আরও কয়েকশ গ্রহ সূর্যের চারপাশ দিয়ে ঘুরছিলো। প্রায় ৫ মিলিয়ন বছর ধরে পৃথিবী ধরতে গেলে জাহান্নামই ছিলো। পৃথিবীর তাপমাত্রা ছিলো ২০০০ ডিগ্রী ফারেনহাইটের চেয়েও বেশি। কোন বাতাস ছিলো না, ছিলো শুধু কার্বন-ডাই-অক্সাইড, নাইট্রোজেন, এবং জলীয় বাষ্প। পৃথিবী ছিলো বিষাক্ত। তখন যদি কোন বস্তু এর মধ্যে পড়তো, তাহলে মুহূর্তের মধ্যেই গায়েব হয়ে যেতো। এই নতুন গ্রহটি ছিলো গলিত পাথর এবং লাভার সমুদ্র।
চাঁদের জন্মঃ
“THEIA” নামক একটা গ্রহ পৃথিবীর খুব কাছ দিয়েই আসতে থাকে।
এটা ছিলো মঙ্গল গ্রহের সমান। প্রায় ১০ মাইল/সেকেন্ড (বুলেট থেকে ২০ গুন বেশি) বেগে এটি মহাকাশে ভ্রমণ করছিলো। এই গ্রহ পৃথিবীকে আঘাত করে। ফলে পৃথিবীর গলিত পৃষ্ঠ উত্তাল হয়ে উঠে, যা সমগ্র পৃথিবীর মধ্যে তরঙ্গ সৃষ্টি করলো। এর ফলে বিলিয়ন টনের মত পাথরের ক্ষুদ্রাংশ পৃথিবী পৃষ্ঠ থেকে উপরে উঠে আসে।
কয়েক হাজার বছর অতিবাহিত হওয়ার কারণে গ্র্যাভিটি এই পাথরকুচিগুলোকে একটা নির্দিষ্ট দূরত্বের মধ্যে আংটির মতো বলয় তৈরি করে ফেলে যেটা ছিল উত্তপ্ত। এটা প্রায় ২০০০ মাইলের মত প্রশস্ত ছিলো। পরবর্তীতে এই বলয় মহাকর্ষের ফলে যুক্ত হয়ে আমাদের চাঁদের জন্ম হয়। মানে বলয়টি চাঁদে পরিবর্তিত হয়।
এই চাঁদ পৃথিবীর অনেক নিকটে অবস্থান করছিলো (প্রায় ১৪০০০ মাইল)। সেসময় পৃথিবীর ঘূর্ণন অনেক বেশি ছিলো। পৃথিবী পৃষ্ঠ ধীরে ধীরে ঠাণ্ডা হচ্ছিলো এবং শক্ত হচ্ছিলো। সম্পূর্ণ দিন ছিল মাত্র ৬ ঘণ্টার। সূর্যাস্ত এবং সূর্যোদয় হতো ৩ ঘণ্টা পর পর। দিন অনেক তাড়াতাড়ি অতিবাহিত হচ্ছিলো। কিন্তু পৃথিবীতে ধীরে ধীরে পরিবর্তন আসছিলো।
এখন আমরা চলে যাই ৩৮০o (প্রায়) মিলিয়ন বছর আগে।
মহাসাগরের সৃষ্টিঃ
পৃথিবীতে পানির অস্তিত্ব নিয়ে বিভিন্ন মতবাদ আছে। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি ভোট পাওয়া তত্ত্বটা হল, মহাকাশ থেকে কোটি কোটি উল্কাপিণ্ড পৃথিবীকে আক্রমণ করে।
কিন্তু এই উল্কাপিণ্ড ছিল ব্যতিক্রম। এই উল্কাপিণ্ডের কারণেই আজকের এত কিছু। উল্কার ভিতরে ছিল স্ফটিক ধরণের পদার্থ, যেগুলো দেখতে লবণ কণার মত। এই স্ফটিকের ভিতরেই ছিল ক্ষুদ্র পরিমাণে পানির ড্রপ্লেট।
এভাবে ২০ মিলিয়ন বছর ধরে উল্কাপিণ্ড পতিত হতে থাকলো পৃথিবীর বুকে। এভাবে পৃথিবীর সমগ্র ভূ-পৃষ্ঠ পানি দিয়ে ভরে গেলো। এই পৃথিবীর বুকে যত প্রকার পানির উৎস আছে, যেমন – সাগর, মহাসাগর, নদী, বৃষ্টি, ঝর্ণা ইত্যাদি সব বিলিয়ন বিলিয়ন বছর পুরানো। এটা মিলিয়ন মিলিয়ন মাইল দূর থেকে এসেছে কোনো এক মাধ্যমের সাহায্যে, যেমন – উল্কাপিণ্ড।
পানি দিয়ে পুরো পৃথিবী ভরাট হয়ে যাওয়াতে পৃথিবীকে আরও পরিপূর্ণ লাগছিলো, আরেকটু গোলাকার লাগছিলো; কারণ, বিশাল খাদগুলো পানিতে পূর্ণ হয়ে গিয়েছিলো। কিন্তু এটা তখনও অনেক ভয়ঙ্কর জায়গা ছিলো। বাতাসের বেগ ছিল বর্তমানের সামুদ্রিক ঝড়ের চেয়েও শক্তিশালী। পৃথিবীর দ্রুত ঘূর্ণনের ফলে মেগা স্টর্ম আঘাত হানতো প্রচুর পরিমাণে। তখন সমুদ্রের ঢেউয়ের তরঙ্গ অনেক বেশি ছিলো। এর কারণ হলো গ্র্যাভিটি। কারণ তখন চাঁদ পৃথিবীর অনেক কাছে ছিলো।
সময়ের আবর্তনের ফলে (প্রায় ৩৮০o মিলিয়ন বছর আগে) চাঁদ পৃথিবী থেকে দূরে সরে যায় এবং পৃথিবীতে পানির ঢেউ কমে যেতে থাকে। মেগা স্টর্ম কমে যেতে থাকে। পৃথিবীর ঘূর্ণনও ধীরগতিতে হওয়া শুরু করে।
ভূমির সৃষ্টিঃ
পৃথিবীর জন্মের প্রায় ১.২ বিলিয়ন বছর পর হঠাৎ করেই পানির নিচের ভূ-পৃষ্ঠ কেঁপে ওঠে এবং আগ্নেয়গিরির বিস্ফোরণ ঘটে। আগ্নেয়গিরির লাভা পুরো সমুদ্রে ছড়িয়ে গিয়ে আগ্নেয় দ্বীপ সৃষ্টি হয়। এই আগ্নেয় দ্বীপ পরে সংযুক্ত হয়ে পৃথিবীর প্রথম মহাদেশ গঠিত হয়।
এখন পৃথিবীর পানি আছে এবং ভূমি আছে। এখন আমরা পৃথিবীকে আমাদের বাসা বলতেই পারি। কিন্তু তারপরও পৃথিবীর আবহাওয়া ছিল বিষাক্ত এবং উষ্ণ। কোনো প্রাণী এই পরিবেশে বেঁচে থাকতে পারতো না।
প্রাণের উৎসঃ
প্রাণ কীভাবে তৈরি হলো, তা নিয়ে অনেক ধরনের অনুমান আছে। তার মধ্যে সবচেয়ে বেশি গ্রহণযোগ্য মতবাদটা এমন – ঐ পরিবেশে গ্রহাণু আর ধূমকেতুর আক্রমণ চলছিলো। ওরা বহন করে এনেছিলো ভিন্ন ধরণের পদার্থ। সেই উল্কাপিণ্ডগুলো পানির গভীরে পতিত হওয়া শুরু করলো।
যখন এরা পানিতে ডুবে যাচ্ছিলো, তখন এরা মিনারেল, কার্বন এবং আদি প্রোটিন নির্গত করতে থাকলো, যা তৈরি হয়েছিলো অ্যামিনো অ্যাসিড দিয়ে।
হাজার ফুট নিচে পানির গভীরে ছিলো অনেক অন্ধকার এবং ঠাণ্ডা। এতে চিমনির মত বস্তুর সৃষ্টি হলো।
এরা গরম বাষ্প নির্গত করতে থাকলো। এবং এখান থেকেই, এই চিমনি থেকে নির্গত রাসায়নিক পদার্থ মিলেমিশেই, কোনো এক উপায়ে তৈরি করেছিলো প্রথম প্রাণের উৎস – এককোষী ব্যাকটেরিয়া।
পানি আনুবীক্ষণিক জীব দ্বারা পরিপূর্ণ হয়ে উঠলো এবং এটাই হলো আমাদের এই পৃথিবীতে প্রাণের ক্রান্তিলগ্ন। এরপর কয়েক শত মিলিয়ন বছর চলে যায়, কিন্তু পাল্টায়নি কিছুই। প্রাণ বলতে ওই এককোষী ব্যাকটেরিয়াই ছিলো।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন