ভালবাসার গল্প
নীরার রোজকার এই ব্যস্ততাটা আমি খুব উপভোগ করি। যতটা না ব্যস্ত হওয়ার কথা, তার চেয়ে বেশি ব্যস্ত ও। এইযে সকাল থেকেই শুধু ছুটোছুটি আর ছুটোছুটি, দমটুকু পর্যন্ত নিচ্ছেনা।ঠিক এই সময়টায় ওকে নতুনভাবে চেনা যায়। কপালে বিন্দু বিন্দু ঘাম জমে আছে, চুলগুলো আলুথালু করে একটা খোঁপা করে রেখেছে। আশ্চর্য!! এই জিনিসগুলো আমার চোখে পড়ছে আর ওর এদিকে কোন খেয়ালই নেই। অথচ রূপসচেতন এই মেয়েটার জীবনের একটা অংশই কেটেছে পার্লারে পার্লারে। মাঝে মাঝে ওর জায়গায় নিজেকে বসিয়ে দেখি। আমিতো ঠিক যেমন ছিলাম, তেমনই আছি। কত বদলেছে ও। আসলে বদলেছে বললে ভুল হবে, বদলাতে হয়েছে। সেজন্যই নীরাটাকে বড্ড বোকা মনে হয়। কি ছিল সেদিন হতভাগা যুবকের!! নামধারী শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের একখানা ডিগ্রি আর দু-চার আনার স্বপ্ন ছিল বোধহয় পকেটে। সে স্বপ্ন দিয়ে কি লাল-নীল সংসার বোনা যায় ! কোন সাহসে সে যুবকের হাতটা ধরেছিল। আর আজই বা কি আছে।মাসের শুরুতে ওর হাতে মাইনের টাকাটা গুঁজে দিতে মরমে মারা যাওয়ার দশা হয়।ওর একসমকার হাতখরচ ছিল বোধহয় এটা। কিন্তু কি, আমাদের কখনও নুন আনতে পান্তা ফুরায় দশা হয়না। দিন শেষে, মাস ফুরিয়ে, বছর ঘুরে বেশ আছিতো। ভাল থাকার সমীকরনটা সরল করেছে এই মেয়েটা। নারী সমাজ অদ্ভুত ভীষণ, এরা সব পারে। তুতুলটাও বোধহয় বুঝে গেছে নারীসমাজে টিকে থাকতে হলে তারও সব কায়দা কানুন রপ্ত করতে হবে। কখনও ওর মুখ থেকে বলতে শুনিনি,
..."বাবা আমাকে কিন্তু ওটা কিনে দিতেই হবে।"
উল্টো শুনেছি-
..."বাবা এ জিনিসটা কি কিনে দেওয়া যায়?"
তাও আবার দৃষ্টি থাকে নীরার দিকে, কখনও সে দৃষ্টিতে অগ্নিবিস্ফোরণ হলে ঐ কথাটুকু পর্যন্ত শেষ হয়না।
ম্যাথ এর ছাত্র ছিলাম। মাঝে মাঝে সহজ কিছু হিসেব গুলিয়ে ফেলি।কিছুই দিতে পারিনি নীরাকে, স্বার্থপরের মত শুধু নিয়েই গেলাম। তারপরও কেন অতটা আফসোস হয়না, যতটা হওয়ার কথা ছিল। বাড়াবাড়ি রকমের ভাল আছি তাই জন্য হয়তো। লাভ ক্ষতির হিসেবটুকু মিলাতেও কিন্তু গোলমেল করে ফেলি। আসলে যে জীবনে নীরা আর তুতুলেরা থাকে সে জীবনে লাভের খাতাটা বন্ধ করার জো নেই।
ব্যাস্ত এই রমণীর ছুটোছুটি কিন্তু চলছেই। হয়তো ছুটোছুটির কোন এক ফাঁকে এ অভাগার জন্য কিছুটা সময় হবে।
......"পেপারটা কি এখন মুখস্থ করা বাকি আছে? বল যদি অফিসটাও বাসায় এনে দেই।"
তিরিক্ষি মেজাজে চড়া গলার এ কথাগুলোর জন্য অপেক্ষা করছিলাম। অন্তত এ কথাগুলো বলার জন্য ওর একবার আমার কাছে আসার সময় হয়। আজকে যদিও মাথার উপরে সূর্যটাকে একটু বেশি তপ্ত মনে হচ্ছে। কারনটা ধরতে পারছিনা, আর পারব বলেও মনে হয়না। তারচে বরং সন্ধ্যায় একটা শিউলি ফুলের মালা হাতে গুঁজে দিব। গন্ধবিহীন এ ফুলটা এত প্রিয় হওয়ার কি আছে কে জানে ! প্রথম দিয়েছিলাম বলে হয়তোবা । কিন্তু সেদিনতো গোলাপ পাইনি তাই। মাঝে মাঝে আবার পোলাউ রেঁধে গাজর কুঁচি ছেড়ে আদুরে গলায় বলত-
..."দেখতো শিউলি ফুলের মত লাগছেনা?"
..." আচ্ছা তোমার শিউলি ফুল এত প্রিয় কেন বলতো?"
..."এফ ডাবল ও এল টা প্রিয় হলে এটা প্রিয় হতে দোষ কি!! "
এরপর আর কথা চলেনা। এফ ডাবল ও-ফুল হয়েও যদি প্রিয় হওয়া যায় ক্ষতি কি ! আজকাল অবশ্য ফুল এনে দিলেও কপট রাগ দেখিয়ে গজগজ করতে থাকে,
......"বলি ফুলগুলো কি একটা একটা করে চাল হয়ে ড্রাম ভরবে।"
এমন বেরসিক মানুষের সাথে তর্কেও যাওয়া যায়না। অনেকটা পথ একসাথে পার করেও ওকে মাঝে মাঝে অচেনা লাগে। রিকশায় খোলা হুডে যে মেয়েটার সাথে কতগুলো ঝুম বর্ষায় কাকভেজা হয়েছি, সে মেয়েটা এখন বৃষ্টি নামলে জানালা ভিড়াতে ব্যস্ত হয়ে পড়ে। নাম না জানা কতগুলো বসন্ত প্রহরে যে হাতভর্তি চুড়ির শব্দে মাথা ধরিয়েছে হিসেব নেই। মাথা ধরাতই বটে। ইচ্ছে করে বারকতক পর পর কানের পর্দা বরাবর চুড়িগুলো দিয়ে ভূমিকম্প নামাতো। আর এখন কেমন সবকিছু সাদামাটা হয়ে গেছে। হয়তো হবার-ই ছিল। মধ্যবিত্ত সংসারে আজকাল বর্ষা-শরৎ-হেমন্ত বলে আলাদা করে কিছু নেই। বৃষ্টি এখন যেন শুধু দেয়ালজুড়ে ল্যাপ্টে থাকা বিচ্ছিরি শ্যাওলার মত। ছুটির দিনগুলো মানেই এক বেলা গড়িয়ে আরেক বেলা অব্দি বিছানার সাথে সখ্যতা। আর নীরার অবসর মানেই বোধহয় বারান্দার মানিপ্ল্যান্টগুলোকে ছাঁটাই করা কিংবা লতানো গাছটাকে গ্রিল গড়িয়ে বাড়তে দেয়া। এই একটা জিনিসকে বড্ড হিংসে হয়, ভাবি আমার ভালবাসায় অনেকটুকুই ভাগ বসায় হৃদয়াকৃতির এ পাতাগুলো। নিতান্তই বোকা আমি, ভালবাসার ধরনটাই হয়তো বুঝে উঠিনি এখনও। নীলরঙা শার্টের বোতাম ঘরে নীরার যে ভালবাসাটুকু আছে সেটাতো দেখেও দেখিনা। কিংবা সারাঘর তন্নতন্ন করে বেডসাইড টেবিলে ওয়ালেটটা খুঁজে পেলে একবারও কেন মনে হয়না কেউ একজন আছেতো এই আলুথালু মানুষটার জন্য। দিনশেষে মনে হয় আটপৌরে দিনগুলো কিন্তু এক একটা বহতা নদীর মত। কখনও কোনদিন এক মুহূর্তের জন্যও থেমে থাকেনি। এমনকি হৃদয়াকৃতির পাতাগুলোকেও গলা ছেড়ে বলতে পারি, 'আমার বন্ধু হলো আকাশ, কেন দ্বিধার চোখে তাকাস !'
আকাশলীনা এ বন্ধুটার সাথে একটা জীবন নাহয় কেটে যাক বেখেয়ালে, বাকি জীবনের সবটুকু পথতো পড়েই আছে। না পাওয়ার হিসেব মেলাতে গেলে মিছে সব। বেঁচে আছে মুঠোবন্দী সব ডানা মেলা মুহূর্ত, আর বেঁচে থাকুক ভালবাসা।
..."বাবা আমাকে কিন্তু ওটা কিনে দিতেই হবে।"
উল্টো শুনেছি-
..."বাবা এ জিনিসটা কি কিনে দেওয়া যায়?"
তাও আবার দৃষ্টি থাকে নীরার দিকে, কখনও সে দৃষ্টিতে অগ্নিবিস্ফোরণ হলে ঐ কথাটুকু পর্যন্ত শেষ হয়না।
ম্যাথ এর ছাত্র ছিলাম। মাঝে মাঝে সহজ কিছু হিসেব গুলিয়ে ফেলি।কিছুই দিতে পারিনি নীরাকে, স্বার্থপরের মত শুধু নিয়েই গেলাম। তারপরও কেন অতটা আফসোস হয়না, যতটা হওয়ার কথা ছিল। বাড়াবাড়ি রকমের ভাল আছি তাই জন্য হয়তো। লাভ ক্ষতির হিসেবটুকু মিলাতেও কিন্তু গোলমেল করে ফেলি। আসলে যে জীবনে নীরা আর তুতুলেরা থাকে সে জীবনে লাভের খাতাটা বন্ধ করার জো নেই।
ব্যাস্ত এই রমণীর ছুটোছুটি কিন্তু চলছেই। হয়তো ছুটোছুটির কোন এক ফাঁকে এ অভাগার জন্য কিছুটা সময় হবে।
......"পেপারটা কি এখন মুখস্থ করা বাকি আছে? বল যদি অফিসটাও বাসায় এনে দেই।"
তিরিক্ষি মেজাজে চড়া গলার এ কথাগুলোর জন্য অপেক্ষা করছিলাম। অন্তত এ কথাগুলো বলার জন্য ওর একবার আমার কাছে আসার সময় হয়। আজকে যদিও মাথার উপরে সূর্যটাকে একটু বেশি তপ্ত মনে হচ্ছে। কারনটা ধরতে পারছিনা, আর পারব বলেও মনে হয়না। তারচে বরং সন্ধ্যায় একটা শিউলি ফুলের মালা হাতে গুঁজে দিব। গন্ধবিহীন এ ফুলটা এত প্রিয় হওয়ার কি আছে কে জানে ! প্রথম দিয়েছিলাম বলে হয়তোবা । কিন্তু সেদিনতো গোলাপ পাইনি তাই। মাঝে মাঝে আবার পোলাউ রেঁধে গাজর কুঁচি ছেড়ে আদুরে গলায় বলত-
..."দেখতো শিউলি ফুলের মত লাগছেনা?"
..." আচ্ছা তোমার শিউলি ফুল এত প্রিয় কেন বলতো?"
..."এফ ডাবল ও এল টা প্রিয় হলে এটা প্রিয় হতে দোষ কি!! "
এরপর আর কথা চলেনা। এফ ডাবল ও-ফুল হয়েও যদি প্রিয় হওয়া যায় ক্ষতি কি ! আজকাল অবশ্য ফুল এনে দিলেও কপট রাগ দেখিয়ে গজগজ করতে থাকে,
......"বলি ফুলগুলো কি একটা একটা করে চাল হয়ে ড্রাম ভরবে।"
এমন বেরসিক মানুষের সাথে তর্কেও যাওয়া যায়না। অনেকটা পথ একসাথে পার করেও ওকে মাঝে মাঝে অচেনা লাগে। রিকশায় খোলা হুডে যে মেয়েটার সাথে কতগুলো ঝুম বর্ষায় কাকভেজা হয়েছি, সে মেয়েটা এখন বৃষ্টি নামলে জানালা ভিড়াতে ব্যস্ত হয়ে পড়ে। নাম না জানা কতগুলো বসন্ত প্রহরে যে হাতভর্তি চুড়ির শব্দে মাথা ধরিয়েছে হিসেব নেই। মাথা ধরাতই বটে। ইচ্ছে করে বারকতক পর পর কানের পর্দা বরাবর চুড়িগুলো দিয়ে ভূমিকম্প নামাতো। আর এখন কেমন সবকিছু সাদামাটা হয়ে গেছে। হয়তো হবার-ই ছিল। মধ্যবিত্ত সংসারে আজকাল বর্ষা-শরৎ-হেমন্ত বলে আলাদা করে কিছু নেই। বৃষ্টি এখন যেন শুধু দেয়ালজুড়ে ল্যাপ্টে থাকা বিচ্ছিরি শ্যাওলার মত। ছুটির দিনগুলো মানেই এক বেলা গড়িয়ে আরেক বেলা অব্দি বিছানার সাথে সখ্যতা। আর নীরার অবসর মানেই বোধহয় বারান্দার মানিপ্ল্যান্টগুলোকে ছাঁটাই করা কিংবা লতানো গাছটাকে গ্রিল গড়িয়ে বাড়তে দেয়া। এই একটা জিনিসকে বড্ড হিংসে হয়, ভাবি আমার ভালবাসায় অনেকটুকুই ভাগ বসায় হৃদয়াকৃতির এ পাতাগুলো। নিতান্তই বোকা আমি, ভালবাসার ধরনটাই হয়তো বুঝে উঠিনি এখনও। নীলরঙা শার্টের বোতাম ঘরে নীরার যে ভালবাসাটুকু আছে সেটাতো দেখেও দেখিনা। কিংবা সারাঘর তন্নতন্ন করে বেডসাইড টেবিলে ওয়ালেটটা খুঁজে পেলে একবারও কেন মনে হয়না কেউ একজন আছেতো এই আলুথালু মানুষটার জন্য। দিনশেষে মনে হয় আটপৌরে দিনগুলো কিন্তু এক একটা বহতা নদীর মত। কখনও কোনদিন এক মুহূর্তের জন্যও থেমে থাকেনি। এমনকি হৃদয়াকৃতির পাতাগুলোকেও গলা ছেড়ে বলতে পারি, 'আমার বন্ধু হলো আকাশ, কেন দ্বিধার চোখে তাকাস !'
আকাশলীনা এ বন্ধুটার সাথে একটা জীবন নাহয় কেটে যাক বেখেয়ালে, বাকি জীবনের সবটুকু পথতো পড়েই আছে। না পাওয়ার হিসেব মেলাতে গেলে মিছে সব। বেঁচে আছে মুঠোবন্দী সব ডানা মেলা মুহূর্ত, আর বেঁচে থাকুক ভালবাসা।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন