শুক্রবার, ৪ সেপ্টেম্বর, ২০১৫

নদীমাতৃক বাংলার বাস্তবতা

নদীমাতৃক বাংলার বাস্তবতা

‘মধ্যরাতের নীল’। শিল্পী: ভিনিতা করিমভিনিতা করিম এই শহরে নতুন নন, এর আগেও বাংলাদেশের নদীর সঙ্গে বিশ্বের নদীর রূপ সৌন্দর্য নিজের করণশৈলীতে উপস্থাপন করেছেন তিনি। ৩৬টি শিল্পকর্মের এবারের প্রদর্শনীতে তাঁর ক্যানভাসে যুক্ত হয়েছে সোনালি, লাল, নীল, হলুদ ও জ্যামিতিক আকারের তন্তুর কাজ। ক্যানভাসের কোনো এক অংশে রয়েছে সুতোয় মিহি জ্যামিতিক আকৃতির রিলিফ বুনন। সুতোর ওপর সুতোর



শহরের অনেক দূরে গিয়ে দালানকোঠার দিকে তাকিয়ে কিছু উলম্ব আকৃতি আর তার সঙ্গে রঙের ঝলমলে আঁচ দেখতে পাই আমরা। সূর্যের আভার চারপাশে হলুদ, কমলা, উজ্জ্বল সিঁদুররঙা লালে ভরে উঠেছে আকাশ—ক্যানভাসে হাজির হয় এমন দৃশ্যকল্প। এ ক্ষেত্রে রঙের সঙ্গে ভিনিতা যুক্ত করেন মসলিন, সাধারণ কাপড়ের টুকরা, এমনকি চটের কাটাকুটি আর খবরের কাগজের টুকরো।

বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ভ্রমণের সময় যে অভিজ্ঞতা সঞ্চয় করেছেন, ছবিতে সেসব হাজির করেন ভিনিতা। নিজে ভারতীয় বংশোদ্ভূত হলেও জার্মানি, সুইডেন, মিসর, ফিলিপাইন, লিবিয়া আর বাংলাদেশ তাঁর প্রিয়। বাংলাদেশের প্রকৃতিতে থাকা অসংখ্য রঙে নিজেকে মিলিয়ে নেন এ শিল্পী, ভিড় আর কংক্রিটের শহরে এসে মানুষের অনুভূতিকে কেটে ফালি ফালি করে সন্নিবেশিত করেন রঙে। উলম্ব আকৃতির ক্যানভাসের গায়ে উষ্ণ তীব্র জমকালো রং ব্যবহার করে জানিয়ে দেন মানুষের অন্তর্গত দহনের কথা। সব মিলিয়ে ‘নদীর গল্পগুলো’ শিরোনামে প্রদর্শনীটি আমাদের উচ্ছলতা দেয়, শান্তি দেয়, আবার জাগায় হাহাকারও।
ভিনিতার একটি কথা নিয়ে তবে আলোচনা হোক:
এখানে আড়াআড়ি ক্যানভাসের উপরিভাগে গাঢ় নীল রং চাপিয়েছেন শিল্পী। তার ভেতর থেকে ভেসে আসছে এক ফালি সোনালি চাঁদ। এর মধ্যে ক্যানভাসের সম্মুখভাগে সোনালি ও বাদামি রঙের শূন্য স্পেস। কিছুটা দূরে সারি সারি ইমারতের আকৃতি। আড়াআড়ি উলম্ব সরু রেখা আর টুকরো টুকরো জ্যামিতি ছুটছে ক্যানভাসের এপার-ওপার। জট পাকানো শহুরে মানুষের ছুটে চলার পথ এই নদী, এই নদীতে কেমন করে নামে নীরবতা, ভিনিতার ছবিতে যেন সেটি অনুভব করা যায়।
 শিল্পী কখনো ডিম্বাকৃতির ফাইবার গ্লাসে গড়া অবয়বের শিরোনাম দিয়েছেন ‘জন্ম’। জন্মের এ প্রতীকী উপস্থাপন কি আমাদের মনে করাচ্ছে জন্মের পূর্বাবস্থা? ভিনিতা করিমের চলমান কথাটি আরেকটি বৈশিষ্ট্য হলো, অনুভূতির চূড়ান্ত রেখায় পৌঁছে সৃজনক্ষমতা প্রকাশের সঙ্গে সঙ্গে দর্শককে শিল্পী জানিয়ে দিচ্ছেন সমসাময়িক প্রকৃতি আর নদীমাতৃক বাংলার বাস্তবতা

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন