সোমবার, ৭ সেপ্টেম্বর, ২০১৫

ভালবাসা কি??

ভালবাসা কি??
-তোমার কি কষ্ট হচ্ছে?
-না।
-ভেবোনা আমি সুস্থ হয়ে যাব।
-কয়বার বললাম আমি তোমাকে নিয়ে চিন্তিত নই।
সাব্বির একটু মন খারাপ করে বলল,সত্যি চিন্তিত নও?
-না।
-তাহলেতো ভাল। 
-আমি ফোন রাখি। তোমার অসুস্থতা নিয়ে আমার কোন দুশ্চিন্তা হচ্ছেনা। গত বারও তুমি একই কাজ করেছ। নিম্মির একশ পাঁচ ডিগ্রি জ্বর বলে বলে বাসায় আনিয়েছো। এবার তাই নিম্মিকেও সাথে করে নিয়ে এসেছি। নিজের দেড় মাসের বাচ্চাকে নিয়ে যে এভাবে মিথ্যে বলতে পারে তাকে আমি বিশ্বাস করিনা!
-তুমি কি ভাবছ প্ল্যানটা আমার একার ছিল? তোমার মেয়েকে জিজ্ঞেস করো আমরা দুজনে মিলে প্ল্যান করেছিলাম কিনা? 
-আমার মেয়ে তোমার সাথে বসে বসে প্ল্যান করেছে? ও কথা বলতে পারে? 
-বুদ্ধিটা কার ছিল প্রশ্ন করো বিশ্বাস না হলে! মিলি আমার সত্যি অনেক জ্বর। ম্যালেরিয়া হয়েছে বোধহয়। তোমার কথা না শুনে হাইকিংয়ে যাওয়াটা অন্যায় হয়েছে। এবারের মত আমাকে কি মাফ করা যায়?
-তুমি এক অন্যায় হাজারবার করবে হাজারবার মাফ চাইবে আর আমি হাজারবার মাফ করব?
-প্লিইইজ
-শোন আমি তোমাকে বলেছি তোমার ফ্রেন্ড সার্কেলের খাটাশ মেয়েটাকে আমার পছন্দ না। তুমি তারপরেও তাদের সাথে মাস্তি করতে গেছো। তখন মনে ছিলনা? 
-আমার বেস্ট ফ্রেন্ড ওরা।
-এক্সকিউজ মি। বেস্ট ফ্রেন্ড হলেই ঢলাঢলি করতে হয়?
-আমি তোমাকে বোঝাতে পারবনা আমি কখনো শান্তাকে মেয়ে হিসেবে জাজ করিনাই। ইমরানের সাথে আমার যেমন সম্পর্ক শান্তার সাথেও তাই। 
-ওহ প্লিজ!!অনেক হয়েছে। তুমি যা খুশি করো হোয়াটএভার। আমাকে আর কখনো ফোন দিবানা।
-মিলি তোমাকে আর নিম্মিকে যদি আর ঘন্টা খানেকের ভেতর না দেখি সত্যি সত্যি আমি দম আটকে মারা যাব।
-সো হোয়াট?
-বলছো?
-শোন, আমার চোখের পানি আমি কাউকে দেখাতে পছন্দ করিনা। আমি যতটুকু বুঝেছি শান্তাকে আসলে তুমি ভালবাসো, তাই তার সম্পর্কে একটা কটু কথাও তোমার ভাল লাগেনা। আর শান্তা কেন এখনো বিয়ে করেনি ভেবেছ আমি বুঝিনা?
-মিলি তুমি কি একটু বাড়াবাড়ি করছোনা?
-বাড়াবাড়ি কে করছে সেটাতো সময়ই বলে দেবে।
-আমি সত্যিই অনেক অসুস্থ,সকালে দুইবার বমি করেছি।
-তো এখন আমাকে কী করতে হবে? নাচব? কী করব? আমাকে না বলে শান্তাকে বলো, সে হয়ত ছুটে আসবে। 
-যাকে বললে ছুটে আসবে আমি তাকেই বলেছি। আর প্লিজ শান্তার সাথে বারবার আমাকে জোড়া লাগানো বন্ধ করো। তুমি মানসিক রোগীর মত কথা বলছো। নিজেও টের পাচ্ছোনা। আমার তিন মাসের বাচ্চা মেয়েটার মাথায় হাত রেখে বলতে পারব আমি সারাজীবনে একটা মেয়েরই প্রেমে পড়েছি আর সেই মেয়েটা হলো আমার বাবুনির আম্মু। তুমি আমাকে আমার মেয়ে আর আমার বউয়ের কাছ থেকে দূরে রেখে এভাবে কষ্ট দিতে পারোনা।
মিলি জবাব না দিয়ে ফোনটা নামিয়ে রাখল। নিম্মি কাঁদছে ঘুম ভেঙে গেছে, ফিডারের দুধটা গরম করতে হবে।
ফোনটা বাজছে। বেজেই চলেছে।
নিম্মি তখন কান্না থামিয়ে ফিডারের বোতলটা দুহাতে আঁকড়ে ধরেছে।
মিলি কোলে শুয়ে থাকা মেয়ের দিকে তাকিয়ে রইল।
-বুদ্ধিটা তোর ছিল সত্যি?
নিম্মি কি বুঝল কে জানে। লাল টুকটুকে জিভ বের করে একটা হাসি দিল।
মিলি বাম হাতের তালুতে চোখের পানি মুছল। বদমাইশ মেয়েটা ওর বাপের হাসি পেয়েছে।
-তোর আব্বুকে দেখতে ইচ্ছে করে?
নিম্মি একটা হাই তুলল। ফিডারের বোতলটা সুবিধে করে ধরতে পারছেনা।
-বুঝেছি তো বাপ বেটি মিলে সারাজীবন আমাকে যন্ত্রণা দিবি।
নিম্মি এইবার বোতলটা জুতমত ধরেছে। মায়ের মুখের দিকে তাকিয়ে একটা বিরক্ত ভাব করল। যার অর্থ, আম্মু বকরবকর না করে ফিডারের বোতলটা একটু খুলে দাওতো আমার খিদে লেগেছে।
দু ঘন্টা পরের কথা।
মিলি চোখে পানি নিয়ে ব্যাগ গোছাচ্ছে। অভিমান আত্মাভিমান রাগ সব চোখের পানিতে ডুবছে আর ভেসে ভেসে উঠছে। সাব্বির নিচে বসে আছে। ওর সত্যিই জ্বর এসেছে। টকটকে লাল চোখ। গায়ে একটা শাল জড়ানো। হু হু করে কাঁপছে। মিলির মা ওর মাথায় পানি ঢেলেছে এতক্ষন। তারপর এসে প্রশ্ন করে গেছে,জামাই কি রাতে থাকবে?
মিলি জবাব দেয়নি। জবাব দিতে ইচ্ছে করছেনা। চুপচাপ ওদের তিনজনের খড়কুটোর বাসাটার ছাদে বসে থাকতে ইচ্ছে করছে। গোলাপ আর টগর গাছটাতে এ কদিন পানি পরেছে কিনা কে জানে। যাওয়ার সময় ডাক্তারের চেম্বার হয়ে যাবে। যে ছেলেটা রোজ ওকে এত কষ্ট দেয় তাকে ডাক্তার দেখাতে হবে। এত জ্বর নিয়ে এতখানি পথ বাইক চালিয়ে আসার কী দরকার ছিল? যদি কিছু হয়ে যেত! মিলি দুদিন পর এটা নিয়ে রাগ করবে। রাগ করে আবার শ্যামলীতে চলে আসবে। শ্যামলী ওর বাপের বাড়ি। মিলি রাগ করে আবার চলে আসবে মেয়েকে নিয়ে। তবে এখন না। আগে বদ মেয়েটার বাপটা সুস্থ হোক....... তারপর।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন