শনিবার, ১২ সেপ্টেম্বর, ২০১৫

করআনের আলো

কুরআনের আলো




নদীর কিনার ঘেঁষে বেড়ে ওঠা কাশফুলগুলো যেন পবিত্রতার প্রতীক হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। ওরা ভাবল, তাদের এবারের আসরটা এখানেই করা যায়। একপাশে নদী, অন্য দিকে কাশফুলের শীতল ছোঁয়া। এ পরিবেশে আড্ডাটা ভালোই জমবে। ঠিক আড্ডা তো নয়, তাদের ইসলামী জ্ঞানচর্চার নিয়মিত বৈঠক।
ওরা চার বন্ধু। আমীন, শাহী, হাসিব ও রাফীক। প্রতি সপ্তাহেই তারা একত্র হয় নির্দিষ্ট কোনো স্থানে। কুরআন-হাদিস অথবা অন্য কোনো ইসলামী বই থেকে সেখানে আলোচনা হয়। হয় সমসাময়িক বিষয় নিয়ে মতবিনিময়ও। ফলে তাদের চিন্তার জগৎটাও দিন দিন বিস্তৃত হচ্ছে বৈ কী!
সময়মতো সবাই উপস্থিত হলো কাশবনে। আলোচনা হলো ‘আল-আসমাউল হুসনা’ প্রসঙ্গে। বৈঠক শেষে রাফীকের বইটি বাসায় নিয়ে গেল হাসিব। বাসায় ফিরেই পড়া শুরু। চমৎকার একটি বই। কুরআন-হাদিসের আলোকে বিষয়ভিত্তিক প্রবন্ধ সঙ্কলন। বইটি হাসিবের এতই ভালো লেগেছে যে, সে সিদ্ধান্ত নিলো এটা আর ফেরতই দেবে না।
হাসিব কোথায় যেন একটা লেখা পড়েছিল। লেখার শিরোনাম ‘এই চোর সেই চোর নয়’। সেখান থেকে সে জেনেছে, বই চুরি করা কোনো খারাপ বিষয় নয়। বইচোর আর সাধারণ চোর এক নয়। বইয়ে তো জ্ঞান থাকে, আর জ্ঞান কখনো চুরি হয় না। তা ছাড়া অনেক বিখ্যাত লোকও বই চুরি করতেন। চুরি মানে মালিককে না বলেই নিয়ে যেতেন আর কি! বিশেষ করে শীতকালে গায়ে চাদর জড়িয়ে লাইব্রেরিতে গিয়ে বই চুরির সুবিধাটা গ্রহণ করতেন তারা। তা না হলে গাঁটের পয়সা খরচ করে ক’টা বই-ই বা কেনা সম্ভব? হাসিব ভাবল, আমি তো আর চুরি করিনি। বলেই এনেছি। সুতরাং আমি ফেরত না দিলে তো সমস্যা হওয়ার কথাই না।
বইটি পড়তে পড়তে এক জায়গায় হাসিবের চোখ আটকে গেল। আল কুরআনের একটি আয়াত, যেখানে বলা হয়েছে, “নিশ্চয়ই আল্লাহ তোমাদেরকে নির্দেশ দিচ্ছেন যে, তোমরা যেন আমানতসমূহ তার প্রাপকদের নিকট পৌঁছিয়ে দাও।” (সূরা নিসা : ৫৮) এর ব্যাখ্যায় হাদিসের উদ্ধৃতি দিয়ে বলা হয়েছে, আমানতের খিয়ানত করা মুনাফিকের লক্ষণ।
এর পর থেকে হাসিবের মাথায় একটি প্রচন্ড যন্ত্রণা শুরু হলো। এ যন্ত্রণার কথা কাউকে বলার মতো নয়। বোঝানোও সম্ভব নয় কাউকে। হাসিব বুঝতে পারল, বইটি তার কাছে আমানত। সুতরাং তা তার মালিককে ফেরত দিতেই হবে। আর বই চুরির ধারণাটাও তার কাছে ভুল মনে হলো। সব চুরি-ই তো চুরি। তা বই হোক কিংবা অন্য কিছু।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন