মঙ্গলবার, ৮ সেপ্টেম্বর, ২০১৫

গ্রহ-উপগ্রহের কক্ষপথ আবতর্নঃ

গ্রহ-উপগ্রহের কক্ষপথ আবতর্ন
======================আল-কুরআন ও আধুনিক বিজ্ঞান- এর ছবি

পবিত্র কোরআনে যখনই চন্দ্র আর সূর্যের কথা বলা হয়েছে তখনই অত্যন্ত গুরত্বের সহিত উল্লেখ করা হয়েছে যে, চন্দ্র আর সূর্য দুটিই নির্দিষ্ট কক্ষপথে ঘূর্ণায়মান অবস্থায় রয়েছে।
”আর তিনিই সৃষ্টি করেছেন রাত্রি ও দিন এবং চন্দ্র ও সূর্য। সবাই নিজ নিজ কক্ষপথে বিচরণ করে।”(সুরা আম্বিয়া, ২১ : ৩৩)
সূর্য যে স্থির অবস্থায় নেই বরং একটি সুনির্দিষ্ট কক্ষপথে বিচরণ করছে এ বিষয়টি আরেকটি আয়াতে উল্লেখ করা হয়েছে :
আর সূর্য স্বীয় গন্তব্য স্থানের দিকে চলতে থাকে। এটা পরাক্রমশালী, সর্বজ্ঞের নিয়ন্ত্রণ।
(কোরআন, ৩৬ : ৩৮)
এই যে বিষয়সমূহ কোরআনের মাধ্যমে আমরা অবগত হয়েছি সেগুলো আমাদের যুগে
জ্যোতির্বিজ্ঞানের পর্যবেক্ষণ দ্বারা উদঘাটিত হয়েছে। জ্যোতির্বিজ্ঞানে অভিজ্ঞজনদের গণনানুসারে সূর্য SOLAR APEX নামক একটি নির্দিষ্ট কক্ষপথে ঘন্টায় ৭,২০,০০০ কিলোমিটার বেগে VEGA নামক একটি নক্ষত্রের দিকে প্নচন্ড বেগে গতিশীল বা ভ্রমণরত রয়েছে। এর অর্থ এই দাড়ায় যে, সূর্য প্রতিদিন গড়ে প্রায় ১৭,২৮০,০০০ কিলোমিটার পথ অতিক্রম করে থাকে। সূর্যের সঙ্গে সঙ্গে সূর্যের মাধ্যাকর্ষণজনিত SYSTEM-এর আওতায় অন্তর্ভূক্ত অন্যান্য গ্রহ, নক্ষত্রগুলোও একই দূরত্ব অতিক্রম করে। অধিকন্তু মহাবিশ্বের সমস্ত নক্ষত্রপুঞ্জ ঠিক অনুরূপভাবে পরিকল্পিত গতিতে চলনশীল রয়েছে। ঠিক এর মতোই গোটা মহাবিশ্ব যে একই ধরণের পথ আর কক্ষপথে পরিপূর্ণ তা নিম্নরূপে
কোরআনে বর্ণিত রয়েছে :
”কসম বহু পথ আর কক্ষপথ বিশিষ্ট আসমানের।” ( সুরা যারিয়াত, ৫১ : ৭)
মহাবিশ্বে প্রায় ২০০ বিলিয়ন গ্যালাক্সি রয়েছে, প্রতিটি গ্যালাক্সি ২০০ বিলিয়ন নক্ষত্রপুঞ্জ নিয়ে গঠিত। বেশীর ভাগ নক্ষত্রের রয়েছে গ্রহ আর গ্রহের রয়েছে উপগ্রহ। গগনমন্ডলের সমস্ত বস্তুগুলোই সঠিকভাবে গণনাকৃত কক্ষপথসমূহে ঘুর্ণায়মানরত রয়েছে। মিলিয়ন মিলিয়ন বছর ধরে এদের প্রত্যেকেই নিজ নিজ কক্ষপথে পরস্পরের সঙ্গে সম্পূর্ণ সামঞ্জস্য ও সঠিক বিণ্যাস রেখে ”ঘুরে” বেড়াচ্ছে প্রচন্ড বেগে । এছারাও রয়েছে অগুনতি ধুমকেত যা নির্ভূলভাবে নিয়ান্ত্রিতরূপে আবর্তন করছে।মহাবিশ্বের কক্ষপথরাজি কেবলি এই গগনমন্ডলীর গ্রহ-নক্ষত্রের জন্য নয়। গ্যালাক্সিগুলোও সঠিকভাবে গণনাকৃত পরিকল্পিত কক্ষপথসমূহে বিশাল গতিতে বিচরণ করে। এই আবর্তণের সময় মহাকাশের ট্রিলিয়ন ট্রিলিয়ন গ্রহ-নক্ষত্র বা ধুমকেতু কোন একটি আরেকটির পথে চলে যায়না কিংবা সংঘর্ষে লিপ্ত হয় না। প্রত্যেক সূর্য, গ্রহ উপগ্রহ সঠিক নিয়মে নির্ভূলভাবে নিজের কক্ষ পথ ধরে কোটি কোটি বছর পরিভ্রমন করছে। যদি কোন গ্রহ বা উপগ্রহের বা সূর্যের বা ধূমকেতুর কক্ষপথে ছন্দপতন হতো তাহলে পুরো নিয়ান্ত্রিত এই বিশাল ব্রহ্মান্ড ধ্বংসযজ্ঞের ভয়ঙ্কর তান্ডবে মেতে উঠতো। সামান্য কয়েক মিলিমিটারও যদি আমাদের এ অনিন্দ্যসুন্দর পৃথিবী কক্ষচ্যুত্য হয় তবে কি ঘটবে এক্ষেত্রে Astro- Physicist- গনের একটা সুন্দর উদাহরন তুলে ধরা হল যা প্রকাশিত হয়েছিল Bilim ve Teknik (Science and Technology Journal), July 1983 সালে-
”সূর্যকে কেন্দ্র করে পৃথিবী ঘূর্ণনের প্রতি 18 কি.মি- এ থেকে যদি মাত্র 2.5 millimetres সরে যায় বা বিচ্যূত হয় তবে পুরো পৃথিবীটা বরফে আবৃত্ত হয়ে পড়বে, যদি 3.1 mm ও বিচ্যূত হয় তবে আমরা সকলেই মৃত্যুমুখে পতিত হবো” আল্লাহ বলেন সুরা তারিক 86:12-
”আমি শপথ করছি শৃঙ্খলিত বৃত্তাকারে আবতর্নশীল মহাকাশের”
এ আয়াত সুষ্পষ্টরুপে এক আবতর্নশীল মহাবিশ্বের কথা আমাদের জানান দেয়। 1400 বছর আগের সময়তো সাধারন একটি টেলিস্কোপও ছিল না আর বর্তমান সময়ের মতো অত্যাধুনিক Astronomical Instrument & method তথা বৈজ্ঞানিক সরঞ্জাম ও যন্ত্রপাতির ব্যবহারও ছিল অচিন্ত্যনীয়। কোরআন নাযিল হওয়ার কালে যে ধুমকেতুটি মহাশূণ্যজগতে অন্যান্য বস্তুর সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে তাল মিলিয়ে ঘূর্ণনরত রয়েছে তা এখনো একই পথে আল্লাহর র্নির্দেশে বিচরন করে চলছে 1 mm ও কক্ষচ্যূত্য হয়নি। যদি হতো এই সাধের পৃথিবীটা দুমড়ে-মুচড়ে ধ্বংশ হয়ে যেতো প্রান ধারনের কোন পরিবেশ থাকতোনা। গ্রহরাজি, গ্রহগুলোর উপগ্রহসমূহ, নক্ষত্রপুঞ্জ আর এমনকি গ্যালাক্সিসমূহ- এসব মহাশূণ্যজাত প্রতিটি বস্তুরই রয়েছে নিজ নিজ কক্ষপথ যেগুলো অত্যন্ত সুক্ষ্ম গণনা দ্বারা নির্ণয় করা হয়েছে (বহু পথ আর কক্ষপথ সুরা যারিয়াত, ৫১ : ৭)। সেই আল্লাহ যিনি সমগ্র মহাবিশ্ব সৃষ্টি করেছেন, তিনি এই সঠিক শৃংখলা প্রতিষ্ঠা করেছেন এবং তিনিই তা বজায় রেখে যাচ্ছেন ।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন